#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]
"ইয়াশের কথা শুনে নিহান তার ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা র**ক্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে, সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।"
"নীলাদ্রি এবং ইরা দু'জনে ক্লাস শেষ হলে ইউনিভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।নীলাদ্রি ফুচকাওয়ালা কে বলছিলো,'মামা আজকের তেঁতুল টা মনে হয় অন্য তেঁতুলের থেকে একটু বেশি টক,তবে খেতে বেশ ভালো লাগছে।ফুচকাওয়ালা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললো,'হুম।আজকে আপনাদের ক্যাম্পাসের একজন ছেলে এই তেঁতুল গুলো দিয়ে বলেছে, আপনাদের যেনো এই তেঁতুলের টক বানিয়ে দেই।"
"নীলাদ্রি তো বেশ অবাক হলো।কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,'কে দিয়েছে?আপনি কি তাকে চেনেন?"
" ফুচকাওয়ালা বললো,'উমমম ছেলেটার নাম জানি না।তবে দেখলে চিনতে পারবো।ছেলেটার গায়ের রং বিদেশীদের মতো ফর্সা।আর বেশ লম্বা-চওড়া।"
"ইরা নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,'বুঝেছি তোর আশিক দিয়ে গেছে।সে তো আবার তোর ব্যাপারে সবকিছু জানে।"
"নীলাদ্রি বাকি ফুচকাগুলো না খেয়ে, দোকানদার কে টাকা দিয়ে চলে গেলো।ইরাও নীলাদ্রির পেছনে এসে বলতে থাকলো,'আমার মনে হয় এই ছেলেটা তোকে অনেক আগে থেকেই চেনে।নইলে, এতোটা জোর দিয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।"
"নীলাদ্রি ইরাকে বললো,'হুম ঠিকই বলেছিস।আর নিহান যে আমাকে অনেক পছন্দ করে, সেটাও আমি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।নইলে, বারবার কেনো এতোটা অধিকার খাটিয়ে কথা বলবে।তবে আমি সেইম এইজ রিলেশনে বিশ্বাসী নয়।"
"ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,'কেনো?সেইম এইজ রিলেশনশিপকে তো আজকাল বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।সমবয়সীরা একে-অপরের মনের কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে।যেটা বয়সের গ্যাপ হলে বুঝতে পারে না।আমি তো সেইম এইজ রিলেশনশিপ বেশি পছন্দ করি।"
"নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,'তুই ঠিক বলেছিস।সেইম এইজে রোমান্স, একে-অপরকে বুঝতে পারা এগুলো ঠিক থাকলেও স্যাক্রিফাইস টা থাকে না।যেটা বয়সের ডিফারেন্স হলে থাকে।বেশিরভাগ সমবয়সী প্রেমিক-প্রেমিকারা একে-অপরকে কথায় কিভাবে হারাবে,হেয় করবে সেই চিন্তা করে।অবশেষে তার শেষ পরিণতি হয় ব্রেকআপ বা ডিভোর্স। কিন্তুু বয়সের ডিফারেন্স হলে যেকোনো একজন স্যাক্রিফাইস করে।আর তাদের বেশিরভাগ কাপলগুলো বাহির থেকে দেখতে বেমানান মনে হলেও,ঘরের ভেতরে তারা খুব সুখে-শান্তিতে দিন কাটায়।আমি মনে করি ভালোবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।একে-অপরকে স্যাক্রিফাইস না করলে সেই সম্পর্ক কখনোও সুখের হয় না।"
"নিহান কে দেখলে তো মনে হয় আমাদের থেকেও ছোট।ওর স্কিন দেখেছিস?কতোটা ফ্রেশ।আমাদের দেশের ছেলেদের স্কিন এতোটা ফ্রেশ নয়।একটু হলেও স্পট থাকবে।নিহান কে দেখলে মনে হয়, তার বয়স ২০বছরের বেশি হবে না।যদিও আজকাল যুগের ছেলেদের দেখলে বয়স বোঝা যায় না।নিহানকে আমার অপছন্দ নয়;তবে তার সাথে রিলেশনশিপ সম্ভব না।আমার এইসব সমবয়সীদের ঝ**গড়াঝা**টি একদম পছন্দ নয়।এখন হয়তো, আমার কথা শুনে একদল সময়বয়সী রোমান্টিক কাপল এসে আমাকে রামধো**লাই দিবে।কিন্তুু, আমি কথাটা সবাইকে বলিনি।সবাই এক নয়।তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মতামত হলো, আমি যদি কাউকে বিয়ে করি; সে আমার থেকে কমপক্ষে ৫-৬বছরের বড় হতে হবে।এর থেকে বড় হলেও সমস্যা নেই।"
"এতক্ষণ ইরা নীলাদ্রির কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলো।নীলাদ্রির কথা শেষ হতেই ইরা বললো,'সৃষ্টিকর্তা যদি তোর ভাগ্যে সমবয়সী একজন কে লিখে রাখে তাহলে কি করবি?"
'তাহলে আর কি করার মেনে নেবো।সৃষ্টিকর্তা যেটা করেন, বান্দার ভালোর জন্যই করেন।'
"ইরা ফিচেল হেসে বললো,'সত্যি গুরুমা আপনার থেকে এই জ্ঞানের বাণী আহরণ করতে পেরে, আমার জীবন ধন্য হলো।এই শিষ্য কে আপনি দোয়া করে দিন, যেনো আপনার মতো হতে পারি।"
"ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।"
---------
"বাসায় গিয়ে নীলাদ্রি দেখলো, ওদের ডাইনিং রুমে দুইজন মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা দাঁড়িয়ে সিতারা বেগমের সাথে কথা বলছে।"
"নীলাদ্রিকে দেখে শায়লা বেগম এগিয়ে এসে মিষ্টি করে হেসে বললেন,'বাহ!মামনি তুমি তো দেখছি ন্যাচারাল বিউটি।এইজন্যই তো আমার ছেলে নিহান তোমাকে এতোটা ভালোবাসে।"
"শায়লা বেগমের মুখে নিহানের নাম শুনে, নীলাদ্রি মনে হয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।নীলাদ্রি ইমতিয়াজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে নিহানের বাবা।সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে বললেন,'নীলাদ্রি মা তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর।আর তারা তোকে দেখতে এসেছে।তাদের ছেলের নাকি তোকে খুব পছন্দ হয়েছে।তাদের ছেলে নিহান একটি ভালো কোম্পানি তে চাকরি করে।নিচু স্বরে সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে কথা গুলো বললেন।"
" নীলাদ্রি সিতারা বেগম কে কিছু না বলেই, চুপচাপ ওর রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে নীলাদ্রি আরেকদফা অবাক হলো।দেখলো, ওর বিছানার এক কোণে নিহান বসে আছে।নীলাদ্রি ভেতরে ঢুকতেই নিহান উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,'নীলাঞ্জনা এতক্ষণ বাইরে কি করছিলে?তোমার জন্য কতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি, সেটা কি তোমার জানা আছে?'নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,'আপনি আপনার বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় কেনো এসেছেন?"
"নিহান বাকা হেসে বললো,'উফফ এতো ন্যাকা সাজো কেনো তুমি?একটু আগেই তো আন্টি তোমাকে সবকিছু বললো।তবুও আমার মুখ থেকে আবারও শুনতে ইচ্ছে করছে বুঝি?ওকে বুঝিয়ে বলছি,'আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য এসেছি।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি এই বাসা থেকে বের হবে না।আমাদের আগামীকাল বিয়ে হবে।তারপর আমরা হানিমুনে যাবো।তারপর তুমি ইউনিভার্সিটিতে যাবে।"
"নিহানের মুখে বিয়ের কথা শুনে নীলাদ্রি মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।ভাবলো, 'একটু আগেই তো ইরা কে বড় বড় ডায়লগ ছেড়ে আসলাম।এখন যদি ইরা জানতে পারে, আমি নিহান কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তাহলে ও তো আমায় পঁচা নালায় ডুবিয়ে মা**রবে।'ভেবেই নীলাদ্রি নিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, 'দেখুন আমি সবসময় সরাসরি কথা বলতে পোছন্দ করি। তাই আপনাকে বলছি,এই বিয়ে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।কারণ,আমি সেইম এইজ রিলেশনশিপ বা বিয়ে পছন্দ করি না।আপনি আর আমি যেহেতু সমবয়সী তাই আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।"
"নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর চুলের খোপা খুলে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো।নীলাদ্রি হঠাৎ এইরকম হওয়াতে চমকে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে তেজি স্বরে বললো,'এটা কি ধরণের অ**সভ্যতা হচ্ছে?আপনি আমার রুমে এসে আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস পেলেন কিভাবে?এখুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।"
"নিহান এইবার নীলাদ্রির হাত ধরে ওকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ওর কাঁধে চিবুক রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,'তোমার শরীরের সেই ঘ্রাণ এখনোও আগের মতোই আছে,শুধু বদলে গেছে তোমার মন-মানসিকতা।আমি চাইলে এখনই তোমাকে আপন করে নিতে পারি,সেই অধিকার আমার আছে।কিন্তুু, কিছু তিক্ত নিয়মের কারণে তোমার থেকে আমার এতোটা দূরত্বে থাকতে হচ্ছে। তবে চিন্তা করো না বিয়ের রাতেই তোমাকে নিজের করে নেবো।আর কখনোও তোমায় হারিয়ে যেতে দেবো না নীলাঞ্জনা।"
"নিহানের কোমল স্বরে কথাগুলো শুনে, নীলাদ্রির শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।নীলাদ্রির নিঃশ্বাস ক্রমাগত ঘন হতে লাগলো।নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ে ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো।এই মুহূর্তে নিহানের নীলাদ্রির ঘাড়ে বা**ইট করতে ইচ্ছে করছে।ওর ভ্যাম্পায়ার সত্তা যেনো আবার নতুন করে জেগে উঠছে।কিন্তুু, নীলাদ্রি যে ওর সাধনা।কিভাবে তার ঘাড় থেকে সে র**ক্ত শুষে নিবে।কিন্তুু নিহানের যে খুব র**ক্তের তৃষ্ণা পেয়েছে।নিহান যেই র**ক্ত পছন্দ করে সেই র**ক্তই নীলাদ্রির শরীরে বইছে।নীলাদ্রির র**ক্তের গ্রুপ B+ পজিটিভ।এটা নিহানের প্রিয় র**ক্ত।তার অন্যতম কারণ হলো,'ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, B+পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের প্রাণীর মস্তিষ্ক ভীষণ তীক্ষ্ণ হয়।তাদের চিন্তা ও বুঝতে পারার সক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো হয়ে থাকে।তাদের পেরিটোনিয়াল এবং টেম্পোরাল লোব বেশি সক্রিয় হয়ে থাকে।সেই সঙ্গে তাদের স্মৃতিশক্তিও বেশ প্রখর হয়ে থাকে।'
নিহান বিভিন্ন ব্লাডগ্রুপ নিয়ে পড়াশোনা করে এই বিষয়ে জেনেছে।তখন থেকেই এই র**ক্ত তার ভীষণ প্রিয়।যদিও নিহান অন্য গ্রুপের র**ক্ত ও পান করে।"
"নীলাদ্রি কে সে যতোই ভালোবাসুক না কেনো,তার অস্তিত্বে ভ্যাম্পায়ারের বসবাস। সে কোনোভাবেই তার অভ্যাসগুলোকে পরিবর্তন করতে পারবেনা।কারণ, এটা যে তার অস্তিত্বে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।যদিও নিহান মানুষের র**ক্ত খুব একটা পান করে না।কারণ,মানবজাতি কে ওর কাছে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী মনে হয়।কিন্তুু পশুর র**ক্ত নিহান প্রতিনিয়ত পান করে।নিহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রিদের বেলকনির ওপর একটি দোয়েল পাখি বসে আছে।নিহান পাখিটির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে,ঝড়ের বেগে গিয়ে পাখিটিকে ধরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খেয়ে ফেললো।"
"নীলাদ্রি এতক্ষণ ওর চোখজোড়া বন্ধ করে অজানা অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলো।ওর এই অনুভূতির কারণ ও নিজেও জানেনা।নীলাদ্রি অনুভব করলো নিহান ওর কাছে নেই।ও চোখজোড়া খুলতেই দেখলো, নিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে লেগে আছে হাসির ঝলক।নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,'আপনি বেলকনিতে কি করছেন?"
"নিহান মুচকি হেসে ওর কাছে এসে বললো,'কেনো তোমার শরীরে আমার করা স্পর্শ ভালো লাগছিলো বুঝি?আবার করবো?"
"নিহানের মুখে ঠোঁটকা**টা টাইপ কথা শুনে নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,'এই ছেলে আপনি এতো নি**র্লজ্জ কেনো?মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,কিছুই দেখি জানেন না।আপনাকে আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার সাথে বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করলে কিন্তুু খুব খারাপ হবে।আমি রেগে গেলে কতোটা ডে**ঞ্জারাস হতে পারি,সেটা আপনার ধারণারও বাইরে।"
"নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর হাত ধরে, হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বললো,'আজকের দিনটা ভালো করে এনজয় করে নাও।আগামীকাল থেকে সবকিছু আমার কথামতো চলবে নীলাঞ্জনা।আর শোনো আমি তোমার সমবয়সী নই।আমি তোমার থেকে ৫বছরের বড়।'বলেই নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।নীলাদ্রি ড্যাবড্যাব করে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ক্ষনিকের জন্য ওর মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো।"
#চলবে...
(আজকে সবার কিউট কিউট কমেন্ট চাই।নইলে কিন্তুু ওদের তিন ভাই কে আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো।হ্যাপি রিডার্স।)
Post a Comment