#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
"নিহান ওদের কৌতূহলী চেহারা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।"
"ইরা নিহান কে বললো,'এমন কোনো নিউজ তো টিভিতে দেখিনি।আপনি কিভাবে জানলেন?"
"নিহান উত্তরে বললো,'সবেমাত্র একটা-দুইটা নিউজ পেপারে বের হয়েছে; খুব তাড়াতাড়ি টিভিতেও দেখাবে।"
"নীলাদ্রির কৌতুহল যেনো এখনও কমছে না।নিহান কে দেখার পর থেকেই,ওর কাছে ছেলেটাকে বেশ অদ্ভুত লাগে।কেমন রহস্য করে কথা বলে ছেলেটা।'নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই ক্লাসে টিচার আসলো।নীলাদ্রি এবং ইরা সহ সবাই এই ক্লাস টিচারের ওপর ফিদা।সহকারী অধ্যাপক রেহান খান দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা এই অধ্যাপকের স্মার্টনেস এবং পার্সোনালিটির ওপর ফিদা।কিছু কিছু মেয়েতো তাকে সরাসরি প্রপোজ ও করেছে।কিন্তুু সে রিজেক্ট করে দিয়েছে।এদিকে অধ্যাপক রেহান ক্লাসে ঢুকতেই নীলাদ্রি এবং ইরা সহ বাকি মেয়েরা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রির সেই অপলক চাহনি দেখে হিংসায় জ্ব**লে-পু**ড়ে যাচ্ছে নিহান।ওর চোখজোড়া ক্রমাগত র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করছে।নিহানের যদি হার্টবিট থাকতো তাহলে হয়তো পাশ থেকে ওর হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শোনা যেতো।নীলাদ্রির এভাবে তাকিয়ে থাকা নিহান সহ্য করতে না পেরে,ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করলো।অধ্যাপকের দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকাতেই,কিছুক্ষণের মধ্যেই তার র**ক্তবমি হতে শুরু করলো।ক্লাসের সবাই বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।মেয়েরা হৈ চৈ শুরু করলো।এদিকে ছেলেরা মি.রেহান কে গিয়ে ধরে লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলো।ওরা ডক্টর কে ফোন করলো।"
"ইরা সবার সাথে অনেক আগেই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেছে।নীলাদ্রি যখনই বের হতে যাবে,তখনই ও খেয়াল করলো পেছন থেকে কেউ ওর হাত টেনে ধরেছে।নীলাদ্রির মনে হলো, ওর হাতে কোনো বরফ জাতীয় জিনিস লেগে আছে।"
"নীলাদ্রি পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিহান ওর হাত ধরে আছে।নীলাদ্রি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,'আপনি এভাবে আমার হাত ধরলেন কেনো?"
"নিহান বাকা হেসে বললো,'নেক্সট টাইম ওই অধ্যাপকের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে না।তাহলে সেটা তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।"
"নীলাদ্রি বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌছালো।নিহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,'আপনি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু্?উনি আমাদের অধ্যাপক।তার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো না তো আপনার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো?আর লোকটার র**ক্তবমি হয়েছে, তাই দেখতে যাচ্ছিলাম।আমি তো আপনার মতো নির্দয় ব্যক্তি না, যে একজনের বিপদের কথা জেনেও এভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো।আমার হাত ছাড়ুন।"
"নিহানের এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।ইচ্ছে করছে নীলাদ্রির ঘাড়ে বাইট করতে।হঠাৎ এহতিশাম নিহানের হাত ধরে বললো,'নিহান নীলাদ্রিকে ছেড়ে দে।"
বলেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো, 'নীলাদ্রি তুমি নিহানের কথায় কিছু মনে করো না।ও একটু অন্যরকম স্বভাবের।ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবে।"
"নিহান নীলাদ্রির হাত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো,'দ্বিতীয়বার যেনো ওই অধ্যাপকের দিকে তোমাকে তাকাতে না দেখি।আমার কথা অমান্য করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে নীলাঞ্জনা।"
"নীলাদ্রি এইবার রেগে উড়নচণ্ডী হয়ে বললো,'হেই লিসেন,আমার যার
দিকে মন চায় তার দিকে তাকাবো।আপনি আমাকে এইসব বলার কে?"
"নিহান দুষ্টু হেসে বললো,'খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে নীলাঞ্জনা।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।" বলেই ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।"
"এহতিশাম ওদের কথোপকথন নীরব দৃষ্টিতে দেখছিলো।আর ইয়াশ এইসব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে ডুমুর ফল খাচ্ছিলো।এহতিশাম ইয়াশের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,'সারাদিন শুধু খাই খাই করিস।গতকাল রাতে এতোগুলো র**ক্ত খেয়েও কি তোর মন ভরে নি?"
"ইয়াশ মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,'কি এমন খেয়েছি?ওদের র**ক্তে যেই বি**ষাক্ত পদার্থ ছিলো।ওটা খেয়ে আমার রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি।তাই তো এখন এটা খেয়ে পেট ভরছি।"
"এহতিশাম আর কিছুই বলার ভাষা খুজে পেলো না।ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে নিহানের পিছু ছুটলো।"
"আজ বাইরে খুব বেশি রোদ পড়ে নি।তবুও নিহান ছাতা হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে দাড়িয়ে ছিলো।
নীলাদ্রি এবং ইরা অধ্যাপক কে নিয়ে আলোচনা করতে করতে ইউনিভার্সিটির বাইরে আসতেই দেখলো, নিহান ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।ইরা নীলাদ্রি কে বললো,'এই ছেলেটা পা**গল নাকি?এখন তো রোদও নেই,আর বৃষ্টি আসারও সম্ভাবনা নেই;তাহলে এভাবে ছাতা মাথায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে কেনো?"
"নীলাদ্রির এমনিতেই নিহানের আচরণে মাথা গরম ছিলো।ইরার কথা শুনে কটাক্ষ করে বললো,'তুই যা ভাবছিস তাই।এই ছেলেটার কেমিস্ট্রি নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করার কারণে পুরো মাথাটাই গেছে।দেখিস না ক্লাসে টিচার কোনো প্রশ্ন করলে কেমন গড়গড় করে উত্তর দেয়।"
"ইরা মাথা নেড়ে বললো,'ঠিক বলেছিস।আচ্ছা এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই,বাসায় চল।'বলেই ওরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।"
"নিহান সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো,'তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার রানী করবো নীলাঞ্জনা।তারপর ওই অধ্যাপক কেনো;কারো দিকেই তুমি চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।শুধু একবার আমার হয়ে যাও।তারপর বুঝবে আমি কি?"
---------------
"রাতে নীলাদ্রি চেয়ারে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করছে আর ভাবছে,'বারবার আমার কেনো ওই বাদুড়গুলোর কথা মনে পড়ছে?আর ওই কালো ছায়ার কথা টা আমি ভুলতেই পারছিনা।কালো ছায়া টা আমায় নীলাঞ্জনা বলে ডাকলো কেনো?ওটা নিশ্চয়ই জ্বীন ছিলো।কারণ জ্বীনেরা সবকিছুই জানে।বিষয়টি মায়ের সাথে শেয়ার করলে, মা চিন্তা করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।এর থেকে ভালো হবে ইরাকে বিষয়টি শেয়ার করি।'ভেবেই নীলাদ্রি ইরাকে ফোন দিলো।একবার রিং হতেই ইরা ফোন রিসিভ করে বললো,'কিরে বান্দরনি রাত ১১টায় আমার কথা মনে পড়েছে?আকাশে তো চাঁদ দেখছি না।ওওওহ বুঝেছি চাঁদ আমার ফোনের অপরপাশে আছে।'বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।"
"নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,'দেখ আমি তোর সাথে মজা করতে ফোন করিনি।খুব সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ফোন করেছি।"
"নীলাদ্রির গম্ভীর কন্ঠে কথাগুলো শুনে ইরা বেশ এক্সাইটেড হয়ে বললো,'হুমম এখন আমি সিরিয়াস মুডে আছি।কি বলবি বল।"
"নীলাদ্রি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গতকাল রাতের সেই কালো ছায়ার ঘটনা টা পুরোপুরি বললো।
ইরা তো এগুলো শুনে বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,'ককককিরে কি বলছিস তুই?ঢাকা-শহরে জ্বীন আসবে কোথা থেকে?এই তুই তোদের ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে রাখিস তো?আমি শুনেছি ওয়াশরুমে বদ জ্বীন থাকে।যারা ওয়াশরুমের দরজা খুলে রাখে, তাদেরকে নাকি বদ জ্বীন আকর্ষণ করে।"
"নীলাদ্রি ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বললো,'আমি ওয়াশরুম থেকে এসে সবসময় দরজা লাগিয়ে রাখি।তাছাড়া এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।"
"ইরা ভীতু কন্ঠে বললো,'আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, তোর পেছনে কোনো দুষ্টু জ্বীন পড়েছে।এক কাজ কর, আগামীকাল ক্লাস মিস দিয়ে আমার এক পরিচিত কবিরাজ আছে তার কাছে যাবো।তার নাম মন্টু মোল্লা।উনি তোকে দেখলেই বলে দিতে পারবে তোর পেছনে কোন জ্বীন পড়েছে।'
নীলাদ্রি ইরার কথায় কবিরাজের কাছে যেতে রাজি হলো।"
-----------
" পরের দিন নীলাদ্রি এবং ইরা হাজির হলো সেই কবিরাজের বাসার সামনে।বাসায় প্রবেশ করে দেখলো ওদের মতো অনেক মানুষ সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ওদের কে ডাকা হলো।ওরা ভেতরে ঢুকতেই কবিরাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, 'ওহে জোড়া কন্যা আমার থেকে দুই হাত দূরত্বে ওই দস্তরখানায় বসে পড়ো।"
"নীলাদ্রির তো কবিরাজ কে দেখে বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।কবিরাজ কে দেখে মনে হয় ওদের বয়সী।তার চুলগুলো স্পাইক করা,মুখে ছোট ছোট দাড়ি।আসন করে বসলেও, তার গঠন দেখে মনে হচ্ছে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী।নীলাদ্রি ইরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,'এটা কি সত্যি কবিরাজ?নাকি অন্যকেউ?আমরা ভুল জায়গায় আসি নি তো?"
"ইরা হেসে নিচু স্বরে বললো,'আরে এটা আসল কবিরাজ।আমার চাচাতো বোন কে জ্বীনে ধরেছিলো।তখন সে অন্য জায়গায় থাকতো,সেখানেই দেখিয়েছিলাম।পরে আমি চাচির কাছ থেকে তার ফোন নাম্বার রেখে দেই।আর এটা হলো ডিজিটাল যুগ।এই যুগের কবিরাজরা একটু স্টাইল করেই চলে বুঝলি।অতশত না ভেবে চল গিয়ে বসি।"
"ওরা কবিরাজের থেকে দুই হাত দূরত্বে বসতেই কবিরাজ চোখ বন্ধ করে বললো,'বলো তোমাদের কার কি সমস্যা?'
'ইরা নিচু স্বরে কবিরাজ কে সবকিছু বললো।'
"কবিরাজ চোখজোড়া খুলে একবার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,'এই মেয়ে নিশ্চয়ই খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো।তাই তার রূপ এবং চুলের সুগন্ধি পেয়ে বদ জ্বীন পিছু নিয়েছে।সমস্যা নেই এগুলো দূর করা আমার হাতের মোয়া।আজ রাতেই সব সমাধান হবে।তবে তার জন্য আমার কিছু জিনিসপত্র লাগবে।তাই কিছু টাকা লাগবে।"
"ইরা জিজ্ঞেস করলো,'কতো টাকা?"
"কবিরাজ বললো,'আপাতত ৩ হাজার টাকা হলেই হবে।বাকিটা আগামীকাল সকালে দিলেই হবে।"
"নীলাদ্রি আগেই জানতো কবিরাজের কাছে আসলে টাকা লাগবে; তাই ও ব্যাগে ৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলো।"
"নীলাদ্রি কবিরাজ কে ৫ হাজার টাকা এগিয়ে দিতেই কবিরাজ তার ডান হাত উঠিয়ে বললো,'আমার পি এর কাছে দাও।"
"নীলাদ্রি ভাবলো,'যেমন দেখতে স্মার্ট, তেমন কথায় ও স্মার্ট।এমন কবিরাজ জীবনে প্রথম দেখলাম।'এর মধ্যেই কবিরাজের পি এ এসে হাজির হলো।নীলাদ্রি তার কাছে টাকাগুলো দিলো।"
'কবিরাজ ওদেরকে আগামীকাল সকাল ১০টায় এসে হাজির হতে বললো।ওরা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।'
"এইদিকে নীলাদ্রি কে ক্লাসে না দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে গেলো।ও ইউনিভার্সিটির বাইরে চলে আসলো।আশেপাশে ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করলো নীলাদ্রি কোথায়। অবশেষে বুঝতেও পারলো,নীলাদ্রি ওর থেকে ১০মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছে।নিহান বাতাসের গতিতে সেখানে পৌঁছালো।রাস্তা দিয়ে কবিরাজ কে নিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছিলো নীলাদ্রি এবং ইরা।হঠাৎ নীলাদ্রি ওর কাঁধে কারো ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া অনুভব করলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো নিহান র**ক্তিম দৃষ্টি নিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি নিহানকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,'আপনি এখানে?"
"নিহান গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, 'আজ ক্লাস মিস করলে কেনো নীলাঞ্জনা?'
#চলবে....
(আসসালামু আলাইকুম।গল্প লেখার জগতে আমি একদম নতুন।অপরিপক্ব হাত দিয়ে লেখার চেষ্টা করছি মাত্র।আপনাদের হয়তো একটা পর্ব পড়তে ৫মিনিট লাগে।কিন্তুু যারা লেখালেখি করে তারা জানে,একটি গল্পের একেকটা পর্ব ভেবে-চিন্তে লিখতে প্রায় ২-৩ঘন্টা লাগে।এতোটা সময় ব্যয় করে শুধু আপনাদের থেকে এক লাইনের সুন্দর একটি উৎসাহ মূলক কমেন্ট পাওয়ার জন্য।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।তাই সবার কাছে অনুরোধ করছি nice,next এই কমেন্ট গুলো না করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।আর লেখার বানানে ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।হ্যাপি রিডার্স।)
Post a Comment