-পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ-
পার্টঃ-০২
(সোফায় বসতে বসতে চারদিকটা দেখতে লাগলাম অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে পুরা বাড়িটা। মনে মনে মেয়েটাকে খুজতাছি। ধুর কই চলে গেলো। মন শুধু ওরে খুজতাছে। কেন জানি মেয়েটাকে অনেক চেনা চেনা লাগতাছে। তারপরে সবাই এলো আড্ডা দেয়ার জন্য। রাফিও ওদের সাথে আড্ডায় মেতে গেলো। রাফি লন্ডন থেকে আসার সময় সবার জন্য কিছু না কিছু গিফট নিয়ে এসেছে। সেগুলা যারতা তাকে দিলো। সবাই তো সেই লেভেলের খুশি। সবাই গিফট পেলেও পেলো না ঝুমুর। আর সেটা কেউ খেয়ালও করলো না। এমনকি রাফির ও মনে নাই সেই কথা। আর রাফি ইচ্ছে করেই ঝুমুর জন্য কিছু আনে নাই। রাতে ডিনার করে যে যার রুমে চলে গেলো। অনেকদিন পরে রাফি তার রুমে গিয়ে দেখলো। তার রুমটা আগে যেমন ছিলো সেরকমই আছে। একটুও চেন্জ হয় নাই। আর রাফির পাসের রুমটা ঝুমুর এর কিন্তু সেটা সে জানে না। অন্যদিকে আজকে ঝুমুর এর নিজেকে বড্ড একা একা লাগে। কিছুই ভালো লাগতাছে না তার। তাই সে গিটারটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। আর দোলনায় বসে পরলো। এই গিটার ই তার মন খারাপের সঙ্গী। গিটারটা আগে রাফির ছিলো। রাফি যখন গান গাইতো তখন ঝুমু ওর পাসে বসে মুগ্ধ হয়ে গান শুনতো। তাই গিটারটা রাফি ওকে দিয়ে দেয়। আর বলে যে আমি যখন তোর থেকে দুরে থাকবো তখন আমার দেওয়া এই গিটারটা দেখে আমার কথা মনে করিস। এই গিটারটায় আগে রাফির নাম খোদাই করা ছিলো। তারপরে রাফি নিজে ওর নামের পাসে ঝুমুরের নামও খোদাই করে দেয়। এই গিটারটা হাতে নিলেই ঝুমুর এর সেই শৈশব এক কথা মনে পরা যায়। ঝুমুর এর কন্ঠ বরাবরই খুব সুন্দর। সে অনেক ভালো গান গাইতে পারে। নাচও পারে। দোলনায় বসে পুরানো সেই দিনের কথা মনে করে ঝুমু গান ধরলো।
-----রিয়ানঃ- হঠাৎ করে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন গান ধরলো। শব্দটা আমার খুবই নিকটে। মনে হচ্ছে কন্ঠটা আমার শত বছরের পুরানো। কিন্তু কার কন্ঠ এটা। জানি না কার। কিন্তু তার কন্ঠ যে আমার হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে। আমি বারান্দায় চলে গেলাম। বারান্দায় গিয়ে দেখি আমার পাশের বারান্দায় একটা মেয়ে দোলনায় বসে গিটার হাতে গান গাচ্ছে। মেয়েটা আমার থেকে কোনাকোনি বসে আছে। হালকা ডিম লাইটে কিছুটা মুখ দেখা যাচ্ছে তবে পুরো টা স্পষ্ট নয়। বাতাসে খুলে রাখা চুল গুলা উরতাচে। হালকা মুখটা দেখে বুজতে পারলাম এই সেই মেয়ে যাকে আমি দরজার পাসে দাড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থেকে বের হয়ে Frezz হয়ে গিয়েছিলাম। এমন অবস্থায় মেয়েটাকে দেখে আবারো ক্রাস খেলাম।
3rd person:- অন্যদিকে ঝুমু এক তালে গান গেয়ে যাচ্ছে। কেউ যে ওকে লক্ষ্য করতাছ সেদিকে ওর কোনো খেয়ালই নাই। এর মধ্যে ঝুমুর এর গান শুনে নীলা বুজতে পারলো যে ঝুমু গান গাইতাছে তাই ওর ঝুমুর রুমে গিয়ে ওর পাসে বসে জিজ্ঞেস করলো--
-----নীলাঃ- কি রে ঝুমু এতো রাতে তোর আবার গান গাওয়ার সখ জাগলো কেন রে?
-----ঝুমুঃ- কই এতো রাত? সবে মাএ রাত ১১টা ছুই ছুই। আর গান গাওয়ার কি নিষেধ না কি?--(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
-----নীলাঃ- না নিষেধ হবে কেন? এমনি বললাম আর কি।
-----ঝুমুঃ- ওহহ তা রাত তো কম হয় নাই তুই এখনো না ঘুমিয়ে আমার রুমে কেন? কিছু বলবি?
-----নীলাঃ- আসলে তোর গান শুনতে পেয়ে চলে এলাম। আজকের এই আবহাওয়ায় তোর গান শুনে মনটা ফ্রেস হয়ে গেলো তাই আর কি শুনতে এলাম।
-----ঝুমুঃ- ওহহ আচ্ছা।
-----নীলাঃ- থামলি কেন গা না।
-----ঝুমুঃ- গান গাইলে আমাকে কি দিবি? সেটা আগে বল তারপরে গাইবো।
-----নীলাঃ- তাই যা চাইবি তাই দিবো। নে এবার তো শুরু কর।
-----ঝুমুঃ- ওকে বাবা গাইতাচি তো ব্যস্ত হস কেন।
3rd person:- ঝুমু আবার গিটারে সুর তুলে গান ধরলো। আর অন্যদিকে রাপি লুকিয়ে লুকিয়ে ঝুমুর এর গান শুনাতাছে আর মনের মাঝে একটা ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে। এ যেন এক অন্য রকম অনুভুতি। গান শেষে যে যার রুমে গিয়ে সুয়ে পরলো। বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাফি ঝুমুর এর কথা ভাবছে আর ঝুমু রাফির কথা।
-----রাফিঃ- আশ্চর্য মেয়েটার নামও এখন পর্যন্ত জানা হলো না। ধুর। থাক কালকে নীলা কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিবো আনে।
✔অন্যদিকে✔
-----ঝুমুঃ- আচ্ছা রাফি ভাইয়ার কি আমার কথা মনে আছে নাকি ভুলে গেছে? না কি এখনো আমাকে ঘৃনা করে। করতেই পারে। সে তো আমাকে দেখতেই পারে না--(মনে মনে)
3rd person:-. এসব ভাবতে ভাবতো ঝুমু ঘুমিয়ে গেলো যে কখনো সে তা নিজেও জানে না। ভোর ৫ টায় ঝুমুর এর ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে জানালার দিকে তাকালো। পাখিদের কিচিরমিচির এ চারপাশটা মুখরিত হয়ে উঠছে। সে যেন এক অন্য রকম অবিজ্ঞতা। আবহাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা। ঝুমুর তাড়াতাড়ি উঠে পরলো না হলে যে নামাজ কাজা হয়ে যাবে। ঝুমুর তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে গোসলটা সেড়ে অযু করে নেয়। তারপরে নামাজ পরে গিয়ে বারান্দায় বসে ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে আচড়াতে থাকে। অন্যদিকে রাফিরও খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় সে ফ্রেস হয়ে চলে যায় বারান্দায় হঠাৎ করে পাসের বারান্দার দিকে চোখ পরে তার। সে দেখতে পায় যে সেই মেয়েটা বসে বসে চুল ঝাড়তাছে। রাফির ঝুমুকে দেখে ঘোর লেগে গেলো। কি টানাটানা হরিনি চোখ যা মুহুর্তে ঘায়েল করে দেয়। ঘন কালো লম্বা চুল কোমড় অবদি ছড়িয়ে গিয়েছে। ঠোটের কোনে লেগে থাকা হালকা হাসিটা এসে সোজা রাফির বুকের বাম পাসে তীরের মতো গেথে যায়।
-----রাফিঃ- মেয়েটা চোখ বাধানো সুন্দর। চোখ ফেরানো যায়। ওই কি তাহলে ঝুমুর? দেখতে একটু হলেও ঝুমুর এর মতো। But i cannot believe that,যে ওইটা ঝুমুর। কারন ঝুমুর এতো sylish ছিলো না। হাবলার মতো দেখতে ছিলো। আসার পর তো একবারও ঝুমুরকে দেখতে পেলাম না। কোথায় ঝুমুর?--ওফফ মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে চিন্তা করতে করতে। পাসে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নাই কোথায় গেলো?
3rd person:- এদিকে ঝুমুর নিচে গিয়ে দেখলো যে তুষার নাস্তা করতাচে। আর ওর আম্মু, বড় আম্মু আর বাকি চাচিরা সবাই রান্না ঘরে ব্যস্ত। ঝুমুর গিয়ে তার ভাই তুষার এর মুখামুখি বসলো।
-----তুষারঃ- হে ঝুমুর তোর কি অবস্থা?
-----ঝুমুঃ- এই তো তোমার কি খবর?
-----তুষারঃ- হুম ভালো। তা আজ এতো সকালে উঠলি যে?
-----ঝুমুঃ- যেরকম করে বলছো মনে হচ্ছে আজ life এর fast time সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠছি।
-----তুষারঃ/ শাঁকচুন্নি যে এতে সকালে ঘুম থেকে উঠে তা তো জানা ছিলো না।
-----ঝুমুঃ- ভাইয়া--তুমি আবারো আমাকে শাঁকচুন্নি বলছো।
3rd person:- তখনই নীলে এসে
-----নীলাঃ- হ্যা ভাইয়া তুমি ঠিক কথাই বলছো ও আসলেই একটা শাঁকচুন্নি।--(হাসতে হাসতে)
-----ঝুমুঃ- ওরে আমার বলদিরে। তুই তো আস্তো একটা নাইজেরিয়ান পেন্তি।
-----নীলাঃ- What?? এতো আজব গালি তোর মাথাও কোথা থেকে আসে রে?
-----ঝুমুঃ- তোর মতো চাইনিজ মেন্টাল কে দেখলে এসব গালি একা একাই বের হয়ে যায়।
-----তুষারঃ- হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। বোইন তোরা থাম।
-----নীলাঃ-শুন জাম্বুরা তোকে না আমরা পাবনা পাঠাতে চাই। তুই আসলেই৷ একটা পাগল। আর তোর সাথে থাকলে আমিও অল্প কয়েকদিনে পাগল হয়ে যাবো।
-----ঝুমুঃ- এই খবর দার। অস্ট্রেলিয়ার বলদি। আমাকে আর একবার জাম্বুরা বলে ডাকবি না।
-----নীলা - কিহহ আমি অস্ট্রেলিয়ার বলদি??
-----ঝুমুঃ- হ্যা হ্যা একশবার তুই অস্ট্রেলিয়ার বলদি।
-----নীলাঃ- তোকে তো আমি--.
-----ঝুমুঃ- কি করবি তুই হে--?
-----ঝুমুরের আম্মুঃ- কি শুরু করলি তোরা? পাগলের দল।
-----নীলাঃ- দেখো না মেঝো আম্মু। তোমার মেয়ে কেমন আমার সাথে ঝগড়া করতাছে।
-----ঝুমুরের আম্মুঃ- হয়েছে হয়েছে। এবার বাদ দে তো। আর ফালতু বকে নাস্তা কর।
-----ঝুমুঃ- ওকে দাও---তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো নিলার বাচ্চা।
-----নীলাঃ- হু--কচু দেখবি।
তারপরে ঝুমু নাস্তা শেষ করে বাহিরে যাবার পথে ঝুমা এসে ওর পাসে দাড়ালো।--(ঝুমা হলো তুষার এর মেয়ে)
-----ঝুমাঃ- আম্মি তুমি কোথায় যাচ্ছো?
-----ঝুমুঃ- ওলে আমার কলিজাটা আমি বাহিরে হাটতে যাচ্ছি। তুমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলে কেন?
-----ঝুমাঃ- আমার ঘুম ভেঙে গেছে তাই। আম্মি আমিও তোমার সাথে হাটতে যাবো।
-----ঝুমুঃ- ওকে চলো--
3rd person:- ঝুমুর ঝুমাকে কোলে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো। আর অন্যদিকে রাফি বারান্দায় এখনো দাড়িয়ে ভাবছে। তখনই হঠাৎ করে৷ নিচে চোখ গেলো। দেখলো ঝুমুর ঝুমাকে নিয়ে খেলছে। আর পিচ্চিটা হাসতে হাসতে কুটি কুটি হচ্ছে। ওর সাথে ঝুমুও হাসছে। আর রাফি অবাগ হয়ে শুধু ঝুমুর এর হাসি দেখছে। ওর হাসি দেখে রাফি ও আনমনে হাসতাছে।
তখনই নীলা পিছন থেকে --
-----নীলাঃ- এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখো ভাইয়া?
-----রাফিঃ- আরে তুই--(চমকে গিয়ে)
-----নীলাঃ- তোমার জন্য কফি নিয়ে আসলাম।
-----রাফিঃ- Thank you dear বনু।
-----নীলাঃ- welcome my sweet brother.তা কি দেখো নিচে?
-----রাফিঃ- ওদের দুষ্টমি দেখি।
-----নীলাঃ- ওহহ ওই শাঁকচুন্নি কে দেখছো তাহলে?
-----রাফিঃ- শাঁকচুন্নি আবার কে রে?
-----নীলাঃ- ওই পিচ্চিটার সাথে যে একটা বলদিকে দেখতে পাচ্ছো। ওকেও বলছি।
-----রাফিঃ- ওহহ আচ্ছা। তা মেয়েটার নাম কি রে?
-----নীলাঃ- ওমা সেকি। ভাইয়া তুমি কি কইতাছো? তুমি ওর নাম জানো না--(মারাত্মক অবাগ হয়ে)
-----রাফিঃ- এতো অবাগ হওয়ার কি আছে? ওর নাম আমি কি করে জানবো।
-----নীলাঃ- তুমি সিরিয়াস ভাইয়া। ভাইয়া তুমি লন্ডন গিয়ে এতোটা change হয়ে গেলে যে ওর নামটাও তুমি ভুলে গেছো।
-----রাফিঃ- তুই বলবি?--(রেগে)
-----নীলাঃ- ওকে বলছি. ও হলো আপনার জানে জিগার, আমার চাচাতো বোন ঝুমুর।
-----রাফিঃ-What???
👉👉👉চলবে👈👈👈
যদি আগের পর্ব মিস করে থাকেন তাহলে ফেন্ড হয়ে পাশেই থাকবেন🥀
Post a Comment