পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ- 


পার্টঃ-১৭

🥀


সবাই যার যার রুমে চলে গেলো। কিন্তু৷ রাফি গেলো ঝুমুরের রুমে। গিয়ে দেখলো ঝুমু গুটিশুটি মেরে বিড়ালছানার মতো ঘুমিয়ে আছে। রাফি অপলক ভাবে ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে 

আছে।


----রাফিঃ- এই মেয়েটাই তো আমার প্রানভোমরা। এ মেয়েটাই তো আমার বেচে থাকার কারন। আর কিছুদিন__তারপরে তোকে আমি নিজের করে পাবো। আমার দেয়া কষ্ট গুলাকে তার থেকে দ্বিগুন ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবো। তোর চোখের কোনে কখনো পানি আসতে দিবো না।


♠দু হাত দিয়ে ঝুমুরের দুই গাল ধরে ওর ঠোটে আলতো করে একটা কিস করে রাফি ওর রুমে চলে গেলো। পরেনদিন সকাল ১০ টার সময় ঝুমুরের ঘুম ভাঙলো। ৭ টার দিকে নীলা একবার ডেকে গিয়েছিলো কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় নাই। ঝুমু ঘুম থেকে ওঠেনি । সাড়ে ৮টার দিকে তার আম্মু ওসে ডেকে গিয়েছিলো কিন্তু ও একটু নড়াচড়া কর ফের আবার ঘুম দিয়েছে। এখন ঘুম থেকে চোখ ডলতে ডলতে ওঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই অবাগ হয়ে গেলো♠


-----ঝুমুঃ- ও মাই গড,,,আমি এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি। ফজরের নামাজটাও মিস হয়ে গেলো। ধ্যাত।___


♠ঝুমুর বিছানা থেকে উঠে গেলো। ওর মাথাটা কেমন জানি ভার ভার লাগছে। তারপরে ধীরে ধীরে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সাথে একদম গোসল করে বের হয়েছে ঝুমু। আজ ও কমলা রঙের কামিজ,, পাজামা,,আর পাতলা ওরনা পরেছে। ভালো মতো চুল ঝেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো ঝুমু। আজকে তার কিছুই ভালো৷ লাগছে না। দুই হাত দিয়ে চুলের মধ্যে হাত দিয়ে চুপটি করে বসে আছে। এ জিবন ঝুমুেরের কাছে নরকের মতঁ।♠


-----ঝুমুঃ- হে আল্লাহ__তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও প্লিজ__আমি যে আর এতো কিছু সহ্য করতে পারছি না। প্রিয়জনকে হারানোর থেকে মরে যাওয়া অনেক অনেক গুন ভালো। এ বিরহের যন্ত্রণা আমি কি করে লাঘব করবো??--(কেদে)


♠ এমন সময় নীচ থেকে ঝুমুকে ওর আম্মৃ ডেকে ওঠলো৷ ঝুমু তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে নিলো৷ কারন সে কাউকে তার কষ্টের কথা জানতে দিবে না। ঝুমুর তড়িঘড়ি করে নিচে যাচ্ছে৷ ওর চুল গুলা বাতাসে উড়ছে আর কাদে বার বার বারি খাচ্ছে। ঝুমুরের আম্মু খাবার টেবিলে সাজাতে ব্যস্ত। রাফি সোফায় বসে বসে ফোন টিপতাছে। আর তুষার রাফির পাসে ঝুমাকে কোলে নিয়ে বসে বসে টিভি দেখছে। আর ওর বাকি চাচিরা সহ তুষারের বউ সবাই রান্না ঘরে ব্যস্ত কারন এখন থেকেই এক জন দুজন করে মেহমান আসতে শুরু করেছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। ঝুমুর আসছে সেটা ওর আম্মু দেখতে পায় নাই তাই আবারো ডাক দিলো ♠


----ঝুমুর আম্মুঃ- ঝুমু__ঝুমু__

-----ঝুমুঃ- আর ডাকতে হবে না আমি এসে গেছি।


♠ঝুমুরের কথা শুনে রাফি ওর দিকে ঝট করে তাকালো সিড়ির দিকে৷ ঝুমুরকে দেখার পরে রাফির হার্টবিট বেড়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ওর হৃদস্পন্দ বাহির থেকে লাউড স্পিকারে শোনা যাচ্ছে। তার পাসে বসা তুষারও তো হয়তো শুনতে পাবে। ও হা করে তাকিয়ে আছে ঝুমুর দিকে। ওর হাতে থাকা ফোনটা ধপ করে কোলে পড়ে গেলো। পাস থেকে তুষার রাফির এমন রিয়েকশন দেখে মুচকি হাসলো ♠


----তুষারঃ- ও ভাই আমার বোনের উপরে নজর লেগে যাবে। এভাবে দেখিস না--(ওর কানের কাছে ফিসফিস করে)


♠তুষার ওর কানের কাছে গিয়ে কথা বলায় ওর ধ্যান ভাঙলো। ও হেসে তুষারের পিঠে একটা জোরে কিল বসিয়ে দিলো♠


-----রাফিঃ- আমার বউকে আমি দেখবো না তো কে দেখবে??আর নজল লাগলে তো আমার নজরই লাগবে। সো বৎস তোমার চক্রায় তুমি তেল দাও।

-----তুষারঃ- পিঠ ভেঙে ফেলেছে রে ও মা গো।। এই যে মিস্টার,,চুটকো,,বিয়ে কিন্তু এখনো হয়নি। হওয়ার পরে বউ ডাকিস আর মন ভরে দেখিস।

-----রাফিঃ- এই যে মিস্টার ভুটকো--বিয়ে হতে আর কতক্ষণ.?? তারপরে তো আমার বউই,,,বুজছোস??


♠এমন সময় রাফির ফোন বেজে উঠলো। নীলাশ ফোন দিয়েছে। বাহির থেকে ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ভিতরে এসে বসলো♠


-----রাফির আম্মুঃ- কে ফোন দিয়েছিলো?

-----রাফিঃ- নীলাশ ফোন দিয়েছিলো??

-----রাফির আম্মুঃ- কি বলেছে??

-----রাফিঃ- বলেছে যে আজ থেকে সপিং শুরু করতে। আন্টি না কি বলেছে আজ থেকে শপিং শুরু করলে আর কোনো চাপ থাকবে না। তাই আজকে আমরা শপিং এ যাবো৷ আর ওদিক থেকে ওরা আসবে।

-----রাফির আম্মুঃ- কয়টার দিকে যাবে??

-----রাফিঃ- ১ ঘন্টা পর ১২টার দিকে।

-----তুষারঃ- ওহহ তাহলে আস্তে আস্তে সবাই রেডি হয়ে নাও পরে বের হলে দেরি হয়ে যাবে।


( রান্না ঘর থেকে অর্না চলে আসলো)


-----তুষারঃ- আমার আম্মুটা আমার সাথে অনেক দুষ্টমি করেছে। অনেক এনার্জি লস হয়েছে। ওকে কিছু খাইয়ে দাও।


♠ অর্না ঝুমাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আর এদিকে নীলা,রিয়া,,জিনিয়া,,ইশিতা,, ওরা সবাই নিচে এসেছে। আর ঝুমু বসে বসে খাবার টেবিলে নাস্তা করছে। ইশিতা এসে ঝুমুরের পিঠে একটা কিল দিলো। তাতে ঝুমু চমকে উঠলো। ইশিতার দিকে তাকাতেই ও হেসে দিলো♠


-----ইশিতাঃ- এতোক্ষণে তোর উঠার সময় হলো জাম্বু?? তোর অনুপস্থিতির জন্য আমরা কিছু ডিসকাস ও করতে পারচি না।

-----ঝুমুঃ- কি ডিসকাস করতে চাও বুজলাম না?? যার জন্য আমাকে দরকার??

-----মিলিঃ- আরে গাধি বিয়ের জন্য কি কি সপিং করবো। তা নিয়ে তোর সম্পূর্ণ মন্তব্য দরকার আমাদের। কোন ড্রেস চুজ করবো। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

-----ঝুমুঃ- তোমাদের যা যা ভালো লাগবে তাই তাই কিনে নাও গিয়ে। আমাকে লাগবে কি জন্য হুদাই।

-----নীলাঃ- কেন তুই কিছু কিনবি না ঝুমু?

-----ঝুমুঃ- না আমার যথেষ্ট জামাকাপড় আছে আমার কিছু কিনা লাগবে না। আর আমি শপিং এ যাবো না। তুই তো জানিস আমি ভির পছন্দ করি না।--(র্নিভিকার কন্ঠে) 

-----মিলিঃ- বলে কি এ মেয়ে?? যে মেয়ে শপিং করার জন্য পাগল আর সেই না কি আজ শপিং এ যাবে না।এতো তেখছি ভুতের মুখে রাম রাম। এই কথা বড় আম্মু আর মেঝো আম্মু শুনলে তোকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলবে বোইন। 


♠তখনই রান্না ঘর থেকে রাফির আম্মুর হাক ভেসে এলো♠


-----রাফির আম্মুঃ- এই রে কে যাবে না শপিং এ বলছে??


♠ ঝুমু বড়সড় একটা ঢোক গিললো আর তখনই ওর চোখ গেলো রাফির উপরে। রাফি ওরদিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঝুমু তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো তখন নিলা জোরে জোরে বলতে লাগলো♠


-----নীলাঃ- ও আম্মু ঝুমু বলছে ও না কি শপিং করতে যাবে না।


♠এ কথা শুনে রাফির আম্মু রান্না ঘর থেকে একটা বেলন হাতে নিয়ে বের হয়ে এলেন। ঝুমুর কাছে এসে♠__


-----রাফির আম্মুঃ- আরেকবার বলতো এমন কথা??

-----ঝুমুঃ- এহেন এহেম---( গলা শুকিয়ে গেছে)--না মানে বড় আম্মু হয়েছে কি আমি না সেদিন কত গুলা শপিং করে আসলাম। আমার এতেই হবে। আবার নতুন করে কিনে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কি দরকার। আর আমার ভালোও লাগছে না। বড় আম্মু।--(আমি কি করে দেখবো আমার ভালোবাসার মানুষ অন্য মেয়ের জন্য শাড়ি গহনা বাকি সব চুজ করবে,,কিনবে। ওসব তো আমি সহ্য করতে পারবো না। কি ভাবে আমি যাবো শপিং এ??)


-----রাফির আম্মু্ঃ- আমি এতো কিচু বাহানা শুনতে চাই না আর না চাই বুঝতে ঝুমু। আমি যখন বলেছি তুই যাবি। তখন তুই যাবিই ব্যাস। শুধু মাএ আজকে দিন না যতদিন বিয়ের জন্য শপিং করতে যাওয়া হবে প্রতিদিন তোকে যেতে হবে। আর এটাই ফাইনাল। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।--(মাঝে মাঝে কি যে হয় না মেয়েটার)


♠ ঝুমু অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। কি আর করার শেষ পর্যন্ত ওর বড় আম্মুর কথায় রাজি হতেই হলো। কারন আর যাই করুক না কেন ঝুমু কখনো ওর বড় আম্মুর কথা ফেলতে পারবে না♠


-----ঝুমুঃ- ওকে ওকে আমি যাবো।--এবার খুশি?

-----নীলাঃ- হুমম বোনু অনেক।। চল এবার আমাদের সাথে।


♠এর পরে ওরা সবাই ঝুমুরকে টেনে নিয়ে গেলো মিলির রুমে। মিলির রুমে নিয়ে ওকে বসিয়ে সবাই ওর চারপাশে গোল হয়ে বসলো,,আর কি কিনবে না কিনবে এসব নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। ঝুমু।মাঝে মধ্যে শুধু হ্যা না করছে যাতে করে ওরা বুজতে পারে যে ঝুমু ওদের কথায় সাড়া দিচ্ছে। কিন্তু ঝুমুর মন তো এখানে নাই ওর মন তো পড়ে আছে রাফির কাছে। আস্তে আস্তে রাজদের পরিবার আর নীলাশদের পরিবারের সবাই চলে এলো রাফিদের বাড়িতে। বাড়ির সবাই আগে থেকে রেডি হয়ে আছে। ওরা আসতেই সবাই শপিং এর দিকে রওনা দিলো। তিনটা বড় Toyta Herice গাড়ি ভর্তি হয়ে গেলো। শুধু মাএ ঝুমু নীলা রাফি আর নীলাশ বাদে। কারন ওরা গাড়ি ভর্তি হবার পরে এসেছে। অন্যদিকে ঝুমু যখন এসে দেখে যে সবাই উঠে পড়ায় তিনটা গাড়ির কোনোটায় তীল পরিমানও যায়গা নাই তখন ও মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে এটা ভেবে যে ওকে আর যেতে হবে না। কিন্তু ওর খুশি আর টিকলো না। রাফি ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ঝুমু বারবার ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।♠__


-----ঝুমুঃ-আমি যাবো না প্লিজ রাফি ভাইয়া। আর এতো মানুষ শপিং মলে গিয়ে কি হবে?? তার থেকে আমি বরং বাড়ি থেকে যাই না প্লিজ প্লিজ। 


♠এবার রাফি প্রচন্ড রেগে ঝুমুরকে ধরে ধাক্কা দিয়ে একটা গাড়ির সাথে মিশিয়ে ওর দু পাসে দুই হাত দিয়ে একদম মুখামুখি হয়ে জিজ্ঞেস করলো♠__


-----রাফিঃ- আরেকবার বলতো আগে কি বলেছিস?? --(রেগে)

-----ঝুমুঃ-( আমি ওর রাগ দেখে এক ঢোক গিলে)--আ আ আমি যাবো না।


♠ এ কথা বলার সাথে সাথে রাফি ঝুমুরের ঠোট দুইটি দখল করে নিলো। ইচ্ছে মতো চুশতে লাগলো রাফি। প্রায় ২-৩ মিনিট পরে ছেড়ে দিলো ঝুমু তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। আর রাফি নেশাভরা চোখে ঝুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমু আজকে বোরকার সাথে কমলা রং এর হিজাব পরেছে ইরানি স্টাইলে। ঝুমুরে ঠোট গুলা এখনো কাপছে। রাফি তা দেখে মুচকি হেসে ওর নাকের সাথে নাক ঘসে♠__


-----রাফিঃ- এখন আবার বলতো কি বলেছিলি তখন??


♠ঝুমু ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো♠


-----ঝুমুঃ- আ আ আমি যাবো।

-----রাফিঃ- এই তো গুড গার্ল চল এখন আমার সাথে।


♠ এই বলে রাফি ঝুমুরের হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। ঝুমু অবাগ হয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটাই অবাগ হয়েছে যে ওকে প্রশ্ন করতেই মনে নাই যে কয়দিন পরে রাফির বিয়ে তাহলে ও ঝুমুরকে কেন কিস করলো ওর হবু বৌকে বাদ দিয়ে?? কিন্তু আফসোস এই প্রশ্নটা ওর পেটেই রয়ে গেলো। আর জিজ্ঞেস করা হলো না। রাফি ঝুমুরকে নিয়ে একটা গাড়ির সামনের ছিটে বসিয়ে ওর পাসে ড্রাইভিং সিটে রাফি বসলো । আর পিছনে নীলা,,নীলাশ৷ গাড়ি চলতে শুরু করলো♠


__চলবো....কি?? 

Post a Comment

Previous Post Next Post