পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ-
পার্টঃ-১৮
😻
♠রাফি ঝুমুরকে নিয়ে একটা গাড়ির সামনের ছিটে বসিয়ে ওর পাসে ড্রাইভিং সিটে রাফি বসলো । আর পিছনে নীলা,,নীলাশ৷ গাড়ি চলতে শুরু করলো। বাকি গাড়ি গুলা ওদের আগেই বের হয়ে গেছে। রাফি গাড়ি চালাচ্ছে আর ঝুমুরের দিকে তাকাচ্ছে। ঝুমুরের ক্লান্ত লাগছে খুব তাই গাড়ির ছিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে। আর নীলা ও নীলাশ পিছনে বসে মাঝে মাঝে টুকিটাকি কথা বলছে৷ প্রায় ৩০ মিনিট পরে শপিং এ এসেচে পৌছালো ওরা। গাড়ি থেকে নেমে সবাই শপিং মলের ভিতরে প্রবেশ করলো।। একজন আরেকজনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর রাফি ঝুমুরের হাত ধরে হাটছে। ঝুমুর আবেগি চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। ওর হঠাৎ করে মনে পরে গেলো আজ থেকে ৫ বছর আগেও রাফি শপিং মলে এলে এরকম করে ঝুমুর হাত ধরে থাকতো। মনে হতো যেন ওকে ছেড়ে দিলেই ও অন্য কোথাও হারিয়ে যাবে। ঝুমুরের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে রাফির আম্মু এসে ওদের দুজনকে একটা শাড়ির শো রুমে নিয়ে গেলো। এদিকে নীলাকে ওর হবু শাশুড়ি ননদ আর নীলাশ মিলে ওকে শাড়ি চুজ করে দিলো। আরেকদিকে মিলিকে ওর হবু শাশুড়ি ওর ননদ আর রাজরা চুজ করে দিচ্ছে। আর এদিকে রাফির আম্মু রাফি ঝুমুর আম্মু ঝুমুরকে শাড়ি চুজ করে দিচ্ছে। রাফির আম্মু একটা একটা শাড়ি তুলে ঝুমুরের গায়ে লাগিয়ে রাফিকে দেখাচ্ছেন। আর প্রতিবারই রাফি রিজেক্ট করে দিচ্ছে। এতে রাফির আম্মু বিরক্ত হয়ে।♠
-----রাফির আম্মুঃ- বাপ আমার,,দয়া করে আমাকে রেহাই দে। আমি আর পারবো না তোর তো কিছুই পছন্দ হয় না আমার এবার বিরক্ত লাগছে।
-----রাফিঃ- ওয়েট আম্মু--তোমার আর বিরক্ত হতে হবে। তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু দেখতে থাকো।
♠ এবার রাফি ঝুমুরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষন করে নিলো। তারপরে ওর কাজে নেমে পরলো। আর এদিকে ঝুমুর তো অবাগ ওর সাথে কি কি হচ্ছে এখন পর্যন্ত সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় পনেরো মিনিট পরে রাফি ভিন্ন রংয়ের কয়েকটা শাড়ি নিয়ে এলো। এবার ওর আম্মুকে বললো_♠
-----রাফিঃ- আম্মু এবার দেখো তো কেমন হয়েছে??
♠রাফির আম্মু শাড়ি গুলা দেখে এক গাল হেসে♠
-----রাফির আম্মুঃ- বাহহহ,,,মাশাল্লাহ আমার ছেলের চয়েজ তো অনেক সুন্দর। খুব সুন্দর হয়েছে।এগুলা পড়লে তোর বউকে একদম হুর পরীর মতো লাগবে।--(ঝুমুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে)
♠রাফি লজ্জিত কন্ঠে একটা হাসি দিলো ওর আম্মুর কথা শুনে। তা দেখে ঝুমুর বুকটা খা খা করে উঠলো ওর চোখটা ঝপসা হয়ে গেলো। কিন্তু তবুও মুখে হাসিটা বজায় রাখলো। তবে সেটা মলিন। তারপরে রাফি নিজে চয়েজ করে চারটা ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের ঘায়রার সাথে টপস। আর দোপাট্টা নিলো। তারপরে ঘরে পড়ার জন্য কয়েকটা নরমাল শাড়িও থ্রিপিস নিলো। গায়রার সাথে মেচিং করে জুতাও নিলো। রাফির এমন পাগলামি দেখে ওর আম্মু আর ঝুমুরের আম্মু তো হাসতে হাসতে শেষ। যে ছেলে বিয়ের আগেই এতো বউ পাগল বিয়ের পরে না জানি কি করবে। বাকি সবাইও রাফির কর্মকান্ড দেখচে আর হাসছে। নীলাশ রাফির পিঠে একটা চাটি মেরে♠
-----নীলাশঃ- চালিয়ে যাও বড় ভাই। তোকে দেখে আমিও শিক্ষা গ্রহন করবো কি ভাবে বউ পাগল হতে হয়।
♠রাফি কিছু বললো না প্রতি উওরে শুধু মাএ একটা হাসি দিলো। তারপরে জুয়েলারি ছাইটে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো ঝুমুরের জন্য জুয়েলারি নিতে লাগলো। বাকি সবাইও আগের মতো কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এদিকে ঝুমুরের এক জোরা কানের দুলের উপরে নজর পরলো। খু্ব সুন্দর কারু কাজ করা। ওর পছন্দ হলো দেখেই। ঝুমু ওটার কাছে গিয়ে দুলটা দুই হাতি নিয়ে হিজাব এর উপরে দিয়ে ধরে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো। রাফি যে সেটা পিছন থেকে দেখেছে সেটা ঝুমু খেয়াল করে নাই। ও কানের দুলাটা ট্রেয়ল করে আবার জায়গা মতো এনে রেখে দিলো। তারপরে বাকি সবাই যেখাসে জুয়েলারি কিনছে সেখানে এসে সবার সাথে দাড়ালো। ঝুমুর ওখান থেকে যাওয়ার পরে রাফি সেখানে গিয়ে ঝুমুর পছন্দ করা দুল জোড়া নিয়ে কাউন্টার বয়কে বললো এটাও প্যাকিং করে দিতে। লোকটা ওটা প্যাকিং করে রাফির হাতে দিলো। রাফি ওটা কাউকে না দেখিয়ে নিজের পকেটে নিয়ে নিলো। তারপরে জুয়েলারি ও আর্নামেন্টস কেনার পরে এবার ছেলেদের কাপর চোপর আর শেরওয়ানি কেনার পালা। তাই এবার সবাই ছেলেদের কাপর চোপরের ছাইটে গেলো। রাফি ঝুমুরের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো♠__
-----রাফিঃ- এই ঝুমু__আমার জন্য শেরওয়ানি কোট,,সুট,,পাঞ্জাবি চুজ করে দে না__প্লিজ।
-----ঝুমুঃ- আমাকে কেন বলছো?__তোমার হবু বউকে বলো তোমাকে ওসব চুজ করে দিতে।
-----রাফিঃ- তাকেই তো বলছি__(আনমনে কি না কি বলে দিলাম)
-----ঝুমুঃ- মানে??
-----রাফিঃ- কিছু না। তোর এতো বুঝে কাজ নাই। তোকে যা কইছি তাই কর না প্লিজ। প্লিজ আর কোনো প্রশ্ন করিস না।
♠ঝুমু প্রতি উওরে কোনো বাক্য ব্যয় না করে কনের ড্রেস আপের সাথে ম্যাস করে শেরওয়ানি_শার্ট_প্যান্ট_কোট_সুট_ও জুতা পছন্দ করে দিলো। ঝুমুরের চয়েজ সব সময়ই বেস্ট। তাই তো বাসায় কেউ কিছু কিনতে গেলে আগে ঝুমুকে ইনফরম করে। বাকিরাও বিয়েতে কি না কি পড়বে এসব পছন্দ করছে নিজেদের ইচ্ছে মতো। কেনাকাটা করতে করতে শপিং ব্যাগ এর ভারে সবাই হাপিয়ে গেছে। কখন যে রাত ৮ টা বেজে গেছে সেদিক তাদের কারো কোনো ভ্রু ক্ষেপও নাই। এখন শুধু মাএ নেশা চেপেছে কেনাকাটার। তখন জিনিয়া আর ইশিতা এসে রাফির আম্মুকে বললো♠
-----জিনিয়াঃ- ও বড় আম্মু শোনো না।
-----রাফির আম্মুঃ- কি হয়েছে বল।
-----ইশিতাঃ- বলছিলাম সেই সকালে খেয়েছি তাও মনে নাই৷ খুব খিদা পাইছে আর পারছি না।
♠তখন রাফি এসে♠
-----রাফিঃ- আম্মু আমাদের কেনাকাটা তো আজকের মতো শেষ তাই না।
-----রাফির আম্মুঃ- হ্যা__আজকের মতো এতেই যথেষ্ট।
-----রাফিঃ- তাহলে এখন চলো রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খাওয়া শেষ করে বাসায় চলে যাই। টায়ার্ড লাগছে খুব।
-----রাফির আম্মুঃ- হুম চল,,,।
♠তারপরে সবাই আস্তে আস্তে রেস্টুরেন্টের দিকে হাটা শুরু করলো। ঝুমুও সবার পাসা পাসি আনমনা হয়ে হাটছে। সবাই ভিন্ন টপিক নিয়ে কথা বলচে। নীলাশ,রাজ আর রাফি ওরা তিনজন একসাথে হাটতাছে। আর কি জানি নিয়ে খুব হাসাহাসি করতাছে। আর ঝুমুর ওকে দেখছে। ঝুমু একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে মার্কেটে জিনিস পত্র কেনার সময় অনেক মেয়েরা রাফির দিকে ক্যামেন করে যেন তাকিয়ে ছিলো। যেটা ঝুমুর মোটেও মেনে নিতে পারছে না। শুধু রাফির দিকে না নীলাশ ও রাজের দিকেও। ওরা তিনজনেই খুব সুদর্শন পুরুষ। ঝুমুরের ইচ্ছে হচ্ছে ওই লুচু মেয়েদের চোখ উপরে দিতে যাতে করে যেন কারো পছন্দের মানুষের দিকে নজর না দিতে পারে। ওর অনেক কিছু মন চাচ্ছে কিন্তু কিছু করতে পারছে না। শুধু মধ্যে মধ্যে জ্বলে পুরে যাচ্ছে। পর মুহুর্তেই ওর মনে পরলো যে রাফি তো তার নয়। তাহলে এতোজ্বলে পুরে কি হবে। এসব চিন্তা করছে ঝুমু তখনই নীলা ওর পাসে আসলো♠
-----নীলাঃ-ঝুমু__তোর কি কোনো কারনে রাগ উঠেছে??
-----ঝুমুঃ-( এই ছেমরি বুজলো ক্যামতে)__না না কই?? তা তোর হঠাৎ এমন মনে হলো কেন??
-----নীলাঃ- তোর তো আবার রাগ উটলে নাক লাল হয়ে যায়৷ যা এখন হয়ে আছে। কান ও হয়তো লাল হয়েছে গেছে কিন্তু হিজাবের জন্য দেখা যাচ্ছে না।
-----ঝুমুঃ- ধুর কি যে বলিস না?? এখানে কে আমার রাগ উঠবে?? এই জায়গায় তাও? এমনিতেই হয়তো লাল হয়ে গেছে আর তুই কি না কি ভাবছিস।
-----নীলাঃ- হুমম হবে হয়তো।
-----ঝুমুঃ- যাই হোক এসব বাদ দে। তা আগে বল নীলাশ ভাইয়ার সাথে তোর প্রেম বিনিময় ক্যামন চলছে--(চোখ টিপ মেরে)
-----নীলাঃ- যাহহ কি যে বলিস না তুই--(লজ্জা পেয়ে)
-----ঝুমুঃ- যা বাবা এখান লজ্জা পাওয়ার কি আছে?? দেখ আমার কি দুর্ভাগ্য তুই আমার তিন মাসের ছোট হয়েও তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর আমার__একেই বলে কপাল।
-----নীলাঃ- চিন্তা করো না বেবি। সেদিন তোমার স্বপ্নও পূরন হবে। তোমারও সেদিন হিল্লে হয়ে যাবে।--(চোখ টিপ মেরে)
-----ঝুমুঃ- মানে?? কি বলিস তুই?
-----নীলাঃ- এতো মানে বুঝে লাভ নাই। শুধু দেখতে থাক কেয়া হুতা হে।--[মুচকি হেসে]
____ফেন্ড রিকু না দিয়ে কেউ next comment করবেন না____
♣ঝুমুর কিছু বুজলো না নীলার কথার। কিছুক্ষণ পরে একটা রেস্টুরেন্টে সবাই গিয়ে পৌছালো। একদিকে টেবিলে রাফি ঝুমু নীলা নীলাশ রিয়া জিনিয়া ইশিতা আছে আর বাকিদের জন্য দুইটা টেবিল বুক করা হয়েছে। যে যার চেয়ারে বসে পরলো। পরক্ষণে রাফি সবার পছন্দ অনুযায়ী ওয়েটার বয়কে খাবার অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পরে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। সবাইর খাওয়া শুরু করলো। সবাই খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আর ঝুমুর খাওয়ার ফাকে ফাকে রাফির দিকে তাকাচ্ছে। রাফি সেটা আগেই লক্ষ করেছে কিন্তু ঝুমুকে ডিস্টার্ব করে নাই। ঝুমু রাফিকে যত দেখে ততোই অবাগ হয় সে মনে মনে বলে__একটা মানুষ কি করে এতো সুন্দর হতে পারে? কেন এতো কিউট সে??
♦আসলে বাস্তবতা হলো প্রিয় মানুষটার চেহারা যেমনই হোক না কেন মন দিয়ে ভালোবাসলে তাকেই তার দেখা সব থেকে সুন্দর মানুষ মনে হয়। ভালোবাসার মানুষকে সকল রুপে সুন্দর লাগে। যেটা ঝুমুরের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কারন সে তাকে ভালোবাসে__তাকে সে ভালোবাসার নজরে দেখে। এমন রকম করে ভালোবাসতে হলে আবেগ দিয়ে নয় সত্যি করে ভালোবাসতে হয়। যেখানে কোনো খাদ থাকলে চলে না।♦
♠রাফি ঝুমুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। যেটা ঝুমুর বুকে তীরের মতো ঘাথলো। এই হাসি জন্য ঝুমু বার বার মরতে পারে। অতঃপরে সবাই খাওয়া শেষ করে এসে গাড়িতে বসলো। শপিং ব্যাগ আগেই গাড়িতে রাখা ছিলো। গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ৩০ মিনিট পরে সবাই বাড়িতে এসে পৌছালো♠
__চলবে..... কি???
Post a Comment