পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ- 

পার্টঃ-১৯

🥀
♠অতঃপরে সবাই খাওয়া শেষ করে এসে গাড়িতে বসলো। শপিং ব্যাগ আগেই গাড়িতে রাখা ছিলো। গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ৩০ মিনিট পরে সবাই বাড়িতে এসে পৌছালো। নীলাশ আর রাজের পরিবারের সবাই কিছুক্ষন রেস্ট করে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। বাকিরাও খুব টায়ার্ড। তাই কেউ আর আড্ডা না দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো। ঝুমু তো সেই আসা মাত্রই রুমে চলে গিয়েছে। এদিকে ঝুমুর রুমে গিয়ে আস্তে আস্তে হিজাব থেকে আলপিন গুলা খুলছে আর নিজেকে খুটিয়ে নাটিয়ে দেখছে। আর ও ভাবছে♠__

-----ঝুমুঃ- আচ্ছা আমি কি দেখতে ওটাই কুৎসিত?_ আমি কি নিজেকে আগের থেকে মোটেও চেঞ্জ করতে পারিনি? আগের সেই হাবা গোবা মার্কা চেহারা পাল্টাতে পারি নি?? আমি কি রাফি ভাইয়ার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি নি?? কেন সে আমাকে একটুও ভালোবাসতে পারে না? আমি কি তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না। হয়তো সে আমার থেকে আরো সুন্দর স্মার্ট মেয়েকে ডির্জাব করে।--(বির বির করে)

♠হিজাব খুলে কাপর চেঞ্জ করে ঢিলাঢালা একটা ফ্রোগ পরে নিলো ঝুমু। চুল গুলা ছেড়ে দিলো। তারপরে বারান্দায় চলে গেলো। বারান্দায় গিয়ে রেলিং ধরে আকাসের দিকে তাকিয়ে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। সে ভাবছে তার বেশির ভাগ বান্ধবির ই বয়ফ্রেন্ড আছে৷ তাকেও অনেক ছেলে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করেছে প্রোপজ করেছে। কিন্তু সে এরকম কোনো কিছুতে তেমন রেসপন্স করে নি। এমনকি যারা ওকে প্রোপজ করেছে তাদেরকে কিছু ভালোমন্দও বলতো না। শুধু মাত্র নীলায়ই ওদেরকে টাইট দিয়েছে। ঝুমুর তো বয়ফ্রেন্ড চায় না। ও এমন একজন মানুষকে চায় যে ওর সুখ দুঃখ ভালোমন্দ__ বলা __না বলা কথা গুলা বুজবে। প্রত্যেকটা ভালো কাজে সার্পোট করবে। তাকে যথেষ্ট কেয়ার করবে। তাকে অনেক ভালোবাসবে♠_

√♠_ আর এমন একটা মানুষই হলো রাফি। যাকে ঝুমুর অনেক আগেই তার মনটা দিয়ে বসে আছে। নিজের থেকেও বেশি যাকে ও ভালোবাসে।♠__♠এদিকে রাফি রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে ফোন টিপতে টিপতে ধীর পায়ে বারান্দার দিকে গেলো। বারান্দা হলো রাফির পছন্দের একটা জায়গা। বারান্দায় বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় মন ভরে। যা খারাপ মনকেও নিমিষেই ভালো করে দেয়। আর রাফির এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না। তাই টাইমপাস করার জন্য বেল কনিতে চলে গেলো। বেলকনিতে দাড়িয়ে রেলিংএ হাত দিয়ে সেও খোলা আকাসের তারাদের মাঝে মন বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আকাসে ভরা চাদ উঠেছে হয়তো আকাসেও আজকে খুশির কিছু হচ্ছে । রাফি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে৷ হঠাৎ করে রাফির কানে পাসের বারান্দা থেকে সুরেলা একটা কন্ঠ ভেসে আসলো। কষ্ট করে সে আকাসের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাসের বারান্দার দিকে তাকালো। দেখলো ঝুমু বারান্দার রেলিং ধরে চোখ বুজে গানের সুর তুলার চেষ্টা করছে। সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঝুমুর দিকে। ওদিকে ঝুমুরও টের পায়নি যে তাকে কেউ একজন এক ধ্যানে দেখতে ব্যস্ত। গানটা ঝুমু নিজের আবেগ দিয়ে শেষ করলো। গানটা শেষ করে ঝুমু কেদে দিলো। কিন্তু সেটা ছিলো শব্দহীন কান্না। কাদতে কাদতে সে রেলিং থেকে হাত সরিয়ে দোলনায় বসে পরলো। অঝোর ধারায় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। ও কিছু মনে নিতে পারছে না। এতোদিনের জমানো ভালোবাসা যে একদিনে শেষ করা যায় না। সে মোটেও রাফিকে ভুলতে পারবে না। পরিস্থিতি তাকে এ কেন নিষ্টুরতায় এসে ফেললো। এসব ভাবতে ভাবতে ওখানেই ঝুমু ঘুমিয়ে গেলো। অপরদিকে রাফি ঝুমুরের গান শুনে স্তব্দ হয়ে গিয়েছে। এতোটা মায়া জরানো ছিলো গানটায়। সে শুধু ঘোরে ঘরে মুগ্ধ হয়ে শুনেছে । ধ্যান ভাঙার পরে ঝুমুর বারান্দার দিকে চেয়ে দেখলো ঝুমু দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। রাফি তড়িঘড়ি করে ঝুমুর রুমে ডুকে বারান্দায় গেলো। গিয়ে দেখলো ঝুমু গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। রাফি আস্তে করে ঝুমুকে কোলে নিলো। ঝুমুরকে কোলে নিয়ে ওর বিছানায় গিয়ে রাফি বসলো। যেই ঝুমুকে শোয়াতে যাবে তখনই __ ঝুমু রাফিকে আকড়ে ধরে__আর ঘুমের মাঝেই ডুকরে কেদে উঠে__রাফি অবাগ হয়ে ঝুমুর দিকে তাকালো_ঘুমের মধ্যেই ঝুমু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে_আর অস্পষ্ট কন্ঠে বলছে_♠

-----ঝুমুঃ-তু_তুমি_অন্য কাউকে বিয়ে করো না__রা_রাফি ভাই। তো_তোমার পাসে আমি অন্য কোনো মেয়েকে মেনে নিতে পারবো না__পারবো না সহ্য করতে_পারবো না। আমি যে একদম নিঃস্ব হয়ে যাবো৷ আমার যে বেচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গেছে।_হয়তো বাকিটুকু শুধু মরে যাবার পালা। হয়তো নিঃশ্বাসটা এই দেহ থেকে বের হয়ে যাবে।--(ঘুমের ঘোরে আবোলতাবোল বকতে)

♠মরার কথা শুনতেই রাফি ঝুমুর মুখ চেপে ধরলো। ঝুমু আবারে রাফির বুকে ঘুমিয়ে গেলো। রাফিও ঝুমুরকে আরো শক্ত করে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে। রাফির চোখে পানি চলে এসেছে ঝুমুর কথা শুনে♠

-----রাফিঃ- এমন কথা বলিস কেন ঝুমু?তুই কি করে ভাবলি তোর রাফি ভাইয়া তোকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ের করবে? তুই আজও আমার ভালোবাসা বুজলি না।?? আর কোনোদিন যেন তোর মুখে মরার কথা না শুনি_তোকে আমি কোনো মতেই হারাতে পারবো না। তুই যে শুধু আমার_আর আমার হয়েই থাকবি সারাজিবন।

♠ রাফি ঝুমুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ওর কপালে গালে ঠোটে চুমু দিলো। রাফি আবার ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে♠_

-----রাফিঃ- ঝুমু তুই কি জানিস না? তুই আমার পুরা দুনিয়া_তুই আমার হৃদয়_তুই আমার Heartbeat_আমার সব কিছু জুরে যে তুইই বিরাজ মান_আমি যে তোকে ছাড়া একদম নিঃস্ব_আমি যে তোকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না_তুই শুধু আমার_শুধুই আমার।--(ঝুমুর কপালে চুমু দিয়ে)

♠তারপরে রাফি ঝুমুকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে চাদর জরিয়ে দিয়ে দরজা ভিরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তারপরে বিছানায় গিয়ে সোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে গেলো। এভাবেই কেনা কাটা শপিং এসব নিয়ে ১১ দিন কেটে গেলো। অবশেষে অনেক প্রতিক্ষার পরে সেই কক্সবাজার যাওয়ার দিন চলে আসলো। সকাল থেকে সবাই খুব ব্যস্ত সময় পার করছে। যার যার প্রয়োজনীয় জিনিস কাপর চোপর ইত্যাদি যা যা লাগবে সব কিছু প্যাক করায় ব্যস্ত সবাই। তিনটা বড় এসি বাসে করে তিন ফ্যামিলির আত্মিয় স্বজন সহ যাবে। বিকেলের দিকে সবাই রওনা দিবে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য। সকালে রওনা হবার কথা ছিলো কিন্তু অনেকের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় রেডি হতেও দেরি হয়ে যায় আর বিকেলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে ঝুমু সে রাতেই ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘুছিয়ে নিয়েছে একটা টলিব্যাগে। আর সকাল সকালই তৈরি হয়ে নিয়েছে ঝুমু। যার কারনে সে বিন্দাস সবার কার্যকালাপ দেখছে। আর নীলা, মীলকেও হেল্প করছে তৈরি হতে। এবার ঝুমু ওর আম্মুর কাছে গেলো আর তাকে জিজ্ঞেস করলো♠__

-----ঝুমুঃ- আম্মু_তোমার কোনো হেল্প লাগবে কি?
-----ঝুমুর আম্মুঃ-ওহহ_ ঝুমু তুই এসেছিস। হ্যা তোর আব্বুর এই কাপর গুলা একটু ভাজ করে প্যাক কর তো।
-----ঝুমুঃ- ওকে আম্মু আমাকে দাও তো তুমি।

♠ এই বলে ঝুমু ঝটপট কাপর গুলা ভাজ করতে শুরু করলো। মাত্র ১০।মিনিটেই সব গুলা প্যাক করা হয়ে গেলো। ঝুমুর আম্মু ওকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে♠

-----ঝুমুর আম্মুঃ- বাহহ_আমার মেয়েটা দেখি সব কাজে এক্সপার্ট। 

♠তখন ঝুমুর আব্বু এসে♠

-----ঝুমুর আব্বুঃ- দেখতে হবে না মেয়েটা কার__আমার মেয়ে তো সকল কাজে কাজী হবেই_তাই না আম্মু?
-----ঝুমুঃ- হুম আব্বু--(জরিয়ে ধরে আব্বুকে)

♠ঝুমুর আব্বু ঝুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে♠

-----ঝুমুর আব্বুঃ- আমার আম্মুটা কত বড় হয়ে গিয়েছে। আর কয়দিন পরে আমার আম্মুটার বিয়ে। তাই না অনু_?

(ঝুমুর আম্মুর নাম অণীতা ঝুমুর আব্বু আদর করে ডাকে অনু। প্রিয় মানুষ ছিলো তাও। দুজন প্রেম করে বিয়ে করেছে)

-----ঝুমু;- আমার বিয়ে মানে?? কিছু বুজলাম না?-(ভ্রু কুচকে)

♠মেয়ের এমন প্রশ্নে মি আলতাফ থতমত খেয়ে গেলেন। তিনি আমতা আমতা করে বললো♠

-----ঝুমুর আব্বুঃ- না মানে নীলা তো তোমার ছোট_ওর যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে_তাহলে তোমারও বিয়ে হতে আর কতক্ষণ_তাই না?

♠ঝুমুর মনটা তবুও খুতখুত করছে। ওর মনে হচ্ছে ওর আব্বু কথা ঘুরাচ্ছে। এর মধ্যে ঠিকই একটা ঘাপলা আছে। কিন্তু ও ঠিক বুজতে পারছে না♠

-----ঝুমুঃ- ওহহ আচ্ছা?? আম্মু আমি ভাবির কাছে যাই। ঝুমা হয়তো ভাবীকে কিছু করতে দিচ্ছে না।
-----ঝুমুর আম্মুঃ- ওকে মা তুই যা।

♠ঝুমু বেরিয়ে যাবার পরে ওর আম্মু ওর আব্বুর দিকে হাকিয়ে উঠলেন♠

-----ঝুমুর আম্মুঃ- আরেকটু হলেই তো ফাস করে দিতে সব কিছু। রাফি যে এটা সারপ্রাইজ প্লান করেছে সেটা কি তুমি ভুলে গেলে?
-----ঝুমুর আব্বুঃ- বলিনি তো_তাহলে এতো রাগ।করছো কেন?
-----ঝুমু্র আম্মুঃ- হয়েছে_হয়েছে_এখন যান আপনিও রেডি হয়ে আমাকে উদার করুন_।
-----ঝুমু্র আব্বুঃ- ওকে_(মুচকি হেসে) 

♠ওদিকে ঝুমু তুষারের রুমে গিয়ে দেখে ঝুমা সত্যি অর্নাকে কিছু করতে দিচ্ছে না। তুষার ওয়াশরুমে। অর্না ঝুমাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ও কান্না করেই যাচ্ছে। অর্না বিরক্ত হয়ে গেছে। এদিকে বিকেল হয়ে এসেছে প্রায় কিন্তু এখনো সে তৈরি হতে পারেনি♠

-----ঝুমুঃ- ভাবী আমার কাছে ঝুমাকে দিয়ে তুমি তৈরি হয়ে নাও। বিকেল হতে বেশি দেরি নাই।
-----অর্নাঃ- ঝুমু তুমি এসেছো?_দেখো না সেই তখন থেকে কি করছে পিচ্চিটা_কতক্ষণ বলে ঘুমাবে_আবার বলে ঘুমাবে না_কতক্ষণ বলে খাবে_আবার বলে খাবে না_কান্নাও থামাচ্ছে না_আমাকে বসতেও দিচ্ছে না। তেমন তোমার ভাই। সকাল থেকে বাপ বেটি মিলে আমার মাথাটা পুরা নষ্ট করে দিচ্ছে। 
-----ঝুমুঃ- আচ্ছা_আচ্ছা-ভাবি তুমি এতো রাগ হয়েও না_ঝুমাকে আমার কাছে দিয়ে তুমি।তোমার কাজ করো।
-----অর্নাঃ- এই নাও_

♠ঝুমাকে ঝুমুরের কাছে দিয়ে অর্না চলে গেলো আর ঝুমু ঝুমাকে কোলে নিয়ে করিডোর এর দিকে গেলো। ঝুমা ওর কোলে লেপ্টে আছে শান্ত হয়ে। ঝুমু জিজ্ঞেস করলো♠_

-----ঝুমুঃ- মামনি তুমি কি এখন কিছু খাবে?_না কি ঘুমাবে?
-----ঝুমাঃ- মাম্মাম_আমি এখন ঘুমাবো_(ঘুমা জরানো কন্ঠে) 
-----ঝুমুঃ- ওকে তুমি মামনির কোলে ঘুমিয়ে পড়ো আমি তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। 

♠ঝুমু ঝুমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আস্তে করে পিচ্চিটা ঝুমুর কোলে ঘুমিয়ে গেলো♠

___চলবো...নি??__ 

Post a Comment

Previous Post Next Post