পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ- 


 ✔পার্টঃ-১৬✔


♠__১৫ দিন পরে Engagement__than__তার পরে ৪ দিন পরে বিয়ে।---১ম দিন--মেহেদি অনুষ্ঠান।---২য় দিন---গায়ে হলুদ।--৩য় দিন---বিয়ে। এসব অনুষ্ঠান গুলা কক্সবাজারের একটা রিসোট এ বসে হবে। নীলাশদের একটা নিজস্ব রিসোট আছে। Engagement এর চার দিন আগেই ওরা কক্সবাজারে চলে যাবে। এ চারদিন ঘুরতেও পারবে। আবার অনুষ্ঠান গুলাও তো সব সেখানে বসে হবে। আর বাকি ১১ দিনে সবাই সপিং করা সম্পূর্ন করবে-♠__ এদিকে একপাসে দাড়িয়ে ঝুমুর নীলাকে খোচাচ্ছে। খোচাতে খোচাতে আর লজ্জা দিতে দিতে ঝুমুর নীলাকে একদম অতিষ্ট করে তুলেছে। আর নীলা বেচারি লজ্জায় না পারছে কিছু বলতে আর না পারলে সইতে। ঠিক তখনই মি আশরাফ চৌধুরী মানে রাফির আব্বু রাফির বিয়ের ঘোষনা দিয়ে বললেন♠__


-----মি আশরাফঃ- আচ্ছা সবাই শুনুন আরো একটা সু খবর আছে। আর সেটা হলো একই দিনে আমার ছেলে রাফিরও বিয়ে হবে। আমার পছন্দের মেয়ের সাথে।


♠সবাই তার কথা শুনে অবাগের চরম পর্যায়ে আছে শুধু মাএ বড়রা বাদে। লারা আর রিয়ার তো অবস্থা সেই রকমের। কারন রাফি হলো ওদের ক্রাশ। যারা সিক্রেট ব্যাপারটা জানে না তারাই অবাগ হ'য়েছে। সব থেকে বেশি অবাগ হয়েছে ঝুমুর। মনে হচ্ছে কেউ ওর থেকে ওর কলিজাটাকে নিয়ে নিলো মুহুর্তেই ঝুমুরের মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। ও দাড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। ওর চোখ রাফির দিকে গেলো। দেখতে পেলো রাফির মুখে হাসি লেগেই আছে। মুখ থেকে এক মুহুর্তের জন্যও হাসি নরছেই না। রাফির এই খুশি দেখে ঝুমুরের মন পুড়ে ছাই হচ্ছে। তখনই রাফির দাদু বলে উঠলো_♠___


-----দাদুঃ- তবে পাত্রী কে সেটা এখন কেউ জানতে পারবেন না। একদম Engagement এর দিনেই সবাই জানতে পারবে যে কার সাথে রাফির বিয়ে হচ্ছে। 


♠_এ কথা শুনে রাফি মুচকি হাসলো। সে ঝুমুরকে সারপ্রাইজ দিবে বলে ওর দাদু সহ যারা যানে তাদেরকে অনুরোধ করেছি কিছু না বলতে। তারাও সবাই রাজি হয়েছে ওর কথায়। অন্যদিকে সবাই রাফিকে congratulation জানালো। ঝুমু নীলাকে বললো_♠__


-----ঝুমুঃ- নীলু--আমার না এতো চেচামেচি ভালো লাগছে না। খুব মাথা ব্যাথা করছে। আমি এখটু আমার রুমে গেলাম--(ভাঙা কন্ঠে) 


♠_নীলা বুজতে পারচে যে ঝুমুর কেন রুমে যেতে চাচ্ছে। সে নিজেও তো অবাগ হয়েছে রাফির বিয়ের কথা শুনে। এটাও জানে না যে কার সাথে রাফির বিয়ে হচ্ছে। ঝুমুরের জন্য ওর প্রচন্ড খারাপ লাগছে। সে বললো_♠__


-----নীলাঃ- বেশি খারাপ লাগছে তোর ঝুমু? আমি আসবো তোর সাথে??

-----ঝুমুঃ-আরে না না তেমন কিছু না,,একটু রেষ্ট নিতে হবে তাহলেই এসব ঠিক হয়ে যাবে। তুই এখানে থাক আমি যাই কেমন??-( ওকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে চলে এলাম)


♠_ ঝুমু রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় ধপাস করে সুয়ে কান্না করছে। ওর মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা ধরে কেউ টানছে। রাফি ছাড়া যে ওর জিবনটা অসম্পূর্ণ। একটা সেকেন্ড ও যে রাফিকে ভুলতে পারবে না। ওর এখন ইচ্ছে হচ্ছে এখনই মরে যেতে। কাদতে কাদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে♠_


-----ঝুমুঃ- আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না রাফি ভাই--বাচবো না। কেন আমার সাথে তুমি এমন করলে?? কি দোষ করেছি আমি তোমার সাথে?? আর আজকে ওই স্পর্শ কাছে আসা এগুলা কি ছিলো তাহলে?? সবাই কি মিথ্যা নাটক ছিলো তোমার??


♠ঝুমুর চিন্তা করছে ও এখন কি করবে। ওর ইচ্ছে হচ্ছে মরে যেতে। বেচে থাকার ইচ্ছে টাই মরে গেছে এখন। কিন্তু ওর যদি এখন কিছু হয় তাহলে তো পুরা বাড়িতে একটা শোকের ছায়া নিমে আসবে। ঝুমুর ওদের সবার আনন্দ।মাটি করে দিতে চায় না। তবে আজ না হয় কাল ও নিজের ক্ষতি নিজে করবেই_♠


-----ঝুমুঃ- আমি সাদরেই মৃত্যুকে গ্রহন করে নিবো। যেখানে তুমি আমার হও নি। সেখানে আমার টিকে থাকার কোনো মানেই হয় না। আমি এতোটা দয়ালু নয় যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখবো। তুমি সুখে থাকবে রাফি ভাই। খু্ব সুখে থাকবে। আমি যেভাবে তোমাকে পাগলের মতো করে ভালোবেসেছি সেভাবে তোমাকে আর কেউ ভালোবাসবে না। কখনোই না।--(উফ মাথা ব্যাথা করছে খুব। এখন একটু না ঘুমালে আমি শান্ত হতে পারবো না।)


♠ তারপরে ঝুমুর ঘুমের ওষধ বের করলো। সেখান থেকে দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ধপাস করে সুয়ে পড়লো বিছানার উপরে এলোমেলো ভাবে। ভাঙা কন্ঠে বলতে লাগলো_♠_


-----ঝুমুঃ- তুই শুধু আমার রাফি শুনেছিস??--তুই শুধুই আমার-- আর কারো হতে পারিস না তুই। মরার পরেও আত্মা হয়ে তোর পিছে পিছে ঘুরবো। তোকে আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না কখনো। বড্ড ভালোবাসি যে তোকে--বড্ড ভালোবাসি।


♣এসব বলতে বলতে ঝুমু ঘুমিয়ে গেলো। তখন প্রায় রাত ৮ টা বাজে।এদিকে মেহমানরা ও বিদায় নিলো। পরশু দিন থেকে শপিং করা শুরু করবে। তিন-তিনটা বিয়ে বলে কথা। প্রচুর কেনা কাটা করতে হবে। যেসময় সবাই বিয়ের কথা নিয়ে আলোচনা করছিলো তখন রাফি শুধু মাএ চোখ দিয়ে ঝুমুরকে খুজছিলো। কিন্তু পেলো না। মেহমারা চলে যাবার পরে রাফি নীলার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো যে ঝুমু কোথায়?? তখন নীলা বললো যে ঝুমুর না কি মাথাব্যাথা করছিলো তাই ওর রুমে গেলো। নীলার কথা শুনে রাফি তড়িঘড়ি করে রাফি ঝুমুরের ঘরে এলো। এসে দেখলো যে ঝুমু এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। চুল গুলা এদিক সেদিক ছড়িয়ে আছে। রাফি গিয়ে ঝুমুরের পাসে বসে আস্তে করে ওর মাথাটা তুলে বালিসে সুয়ে দিলো। আর ছড়ানো চুল গুলা মুখ থেকে আলতো করে সরিয়ে কানের নিচে গুজে দিলো। রাফি বুজতে পারছে ঝুমুরের এমন হবার কারন। ও কল্পনাও করতে পারছে না। যে একটা মেয়ে তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কত sacrifice করতে পারে। ঠিক কতটা ভালোবাসলে প্রিয় মানুষটার জন্য এমন করা যায়♠__


-----রাফিঃ- একটু ধর্য্য ধর ঝুমু। দেখবি তোর ভালোবাসা পূর্নতা পাবে। আমাদের ভালোবাসা সারাজিবন অটুট থাকবে। শুধু।মাএ কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। তারপরই আমাদের দুটি মন এক হয়ে যাবে। কোনো এক পূর্নিমার রাতে তুই আর আমি এক হবো। এক হবে তোর আর আমার ভালোবাসা। I love you,, ঝুমুর__I love you_আমার পাগলিটা।--(ঝুমুর চোখের পাতায় চুমু দিয়ে)


♠রাফি আর ঝুমুকে জাগালো না গায়ে একটা চাদর জরিয়ে দিয়ে নিচে চলে গেলো। আর নীলা আগে থেকেই পরিবারের সবাইকে বলে রেখেছে যে ঝুমুরের মাথা ব্যাথা করায় ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। তাকে যেন ডিস্টার্ব করা না হয়♠


-----ঝুমুর আম্মুঃ- দেখো_দেখো কি কান্ড। না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো মেয়েটা আমার। এমনিতেই ওর শরীর এখনো অনেক দুর্বল__আমার কথা তো একেবারেই শুনতে চায় না।--(হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে)

-----রাফির আম্মুঃ- আসলে__মেহমান,, বিয়ের ডেট এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমার পাখিটার দিকে ভালো করে নজর দিতে পারলাম না।

-----নীলাঃ- চিন্তা করো না ওকে আমি আগে থেকেই আমার সাথে বিরিয়ানি আর স্যান্ডউইচ খায়েছি জোর করে। so,এখন না খেলেও কোনো সমস্যা হবে না।

-----রাফিঃ- এই না আমার লক্ষী বোনটা। খুব ভালো কাজ করেছিস।

-----নীলাঃ- আমি আবার খারাপ কাজ কখন করলাম??--(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)

-----রাফিঃ- তুই আসলেই একটা মাথা মোটা,,ছাগল---আমি কি তোকে এগুলা বলেছি যে তুই খারাপ কাজ করেছিস??

-----নীলাঃ- বলো নাভ তবে ইঙ্গিতে তো বলেছো।

-----রাফিঃ- কখনো না। ঝগড়ুটে গরু। ঝগড়া করার আর কোনো উপায় খুজে পাস না তাই না??

-----নীলাঃ- আবুউউ__আম্মুউউ__দেখো না তোমাদের গুনধর ছেলে আমাকে কি সব বলছে।-(কাদো কাদো হয়ে) 

-----রাফির আম্মুঃ- কি শুরু করেছিস তোরা আবার? বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করা ছাড়া আর কি কোনো কাজ নাই তোদের?. হাতে গোনা কয়েকদিন পরে তোদের বিয়ে আর তোরা কি এখন মারামারি করছিস? তোদের কাছ থেকে তোদের বাচ্চাকাচ্চা কি শিখবে??


♠এবার রাফি আর নীলার দুই ভাইবোনেরই জায়গা মতো লেগেছে। লজ্জায় দুইটা লাল হয়ে গেছে। ওরা মনে মনে এটাই বলছে__"হে ধরনি দ্বিধা হও শেষ পর্যন্ত কি না সবার সামনে এ রকম লজ্জা__বাকিরা সবাই হেসে উঠলো ওদের অবস্থা দেখে। মি: আশরাফ ডেকে উঠলেন রাফি আর নীলাকে♠


-----মি আশরাফঃ- নীলা__রাফি__ এদিকে বাবার কাছে আসো তো।


♠রাফি ও নীলা ওরা মি আশরাফ এর কাছে গেলেন। মি আশরাফ ওদের দুই পাসে বসিয়ে জরিয়ে ধরলেন♠


-----মি আশরাফঃ- দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গিয়েছে আমার কলিজার টুকরা গুলা। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না কয়দিন পরে আমার পাখি দুইটার বিয়ে__(দুজনের কপালে চুমু খেলেন তিনি)

-----নীলাঃ- আব্বু আমি বিয়ে করবঁ না। আমি তোমাকে না দেখে এক মুহুর্তেও থাকতে পারবো না।--(কাদো কাদো হয়ে)


♠মি আশরাফের চোখও ছলছল করে উঠলো। তার একমাএ আদরের মেয়ে নীলা। প্রচুর ভালোবাসে ওকে। কোনোদিন একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেয় নাই। নীলাকে একবার না দেখলে ওনার পুরা দিনটা ভালো কাটে না__ঠিক তেমনই ঝুমুরও মি আলতাফের একমাএ চোখের মনি। ওকে সেও চোখে হারায়। রাফির সাথে ঝুমুরের বিয়ে দিতে তিনি রাজি হয়েছেন তার প্রধান কারন হলো---বিয়ের পরও ঝুমু তার চোখের সামনেই থাকবে। আর ২য় কারন রাফির চোখে তিনি ঝুমুর জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছেন। তিনি যেভাবে ঝুমুর কেয়ার করে তেমনই রাফি ওকে আগলে রাখে। বড় কথা হলো ওনার মেয়েটা তো ওনার চোখের সামনেই থাকবে। আর যে যায়গায় রাফির দাদু এ বিয়ে ঠিক করেছেন সে জায়গায় কেউ আসতে পারবে না সে বিয়ে ভাঙতে। কারো এমন দুঃসাহস নাই। তারপরে ওরা সবাই বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করে যে যার রুমে চলে গেলো সবাইক গুড নাইট বলে♠__


   ~~~চলবে~~~ 

Post a Comment

Previous Post Next Post