গল্পঃ- ভাবির ছোট বোন
পর্বঃ- ১
লেখকঃ- Md Monir Uddin Shisir
ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে সবাই, শুধু আমি যাচ্ছি না
মাঃ- ঐ তোর কী হলো,তুই যাবি না
শিশিরঃ- না আমি যাবো না
মাঃ- কেন
শিশিরঃ- এমনি,তোমরা যাও,আমি গিয়ে কী করবো
এরপর সবাই চলে গেলো,ওরা যাচ্ছে এরিমধ্য আমার পরিচয়টা দিয়ে দেয়,ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, আমি শিশির,বাবা মায়ের আদরের ছোট সন্তান, আমার দুই বোন সবার বড়,আর ভাইয়া আমার বড়
গল্প ফিরা যাক....
মেয়ের বাড়িতে চলে গেলো,সবার জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো, মেয়ে দেখে মা বাবা সবার পছন্দ হয়েছে, এজন্য ভাইয়াকে ও আমার হবু ভাবিকে কথা বলার জন্য আলাদা রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো
দুজনেই চুপ করে আছে কেউ কিছু বলছে না,কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে ভাবি সালাম দিলল আর বললো
ভাবিঃ- আপনি কেমন আছেন
ভাইয়াঃ- ভালো,আপনি?
ভাবিঃ- ভালো,আপনার কী কিছু বলার আছে
ভাইয়াঃ- না, তেমন কিছু বলার নেই
ভাবিঃ- আমাকে আপনার জীবন সাথী করতে কী কোনো আপত্তি আছে
ভাইয়াঃ- না,আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে
ভাবিঃ- আপনার কী আর কোনো ভাই নেই,সব বোন এসেছে দেখছি
ভাইয়াঃ- আছে,কিন্তু সে আসে নি
ভাবিঃ- ওহ,কিন্তু কেন,আপনার বিয়েতে কী সে খুশি নেই
ভাইয়াঃ- আরে না,সে খুশি না থাকলে তো আমি বিয়েতে রাজিই হতাম না
এভাবে তারা অনেকক্ষণ কথা বলার পর বেরিয়ে এলো,সবার মতামত নিয়ে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করা হলো, দুই সাপ্তাহ পর বিয়ে
সবাই মেয়ের বাড়িতে থেকে চলে এলো,আমি বিকালে আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলাম
রিয়াদ (আমার বন্ধু)ঃ- কিরে, তোর ভাবি দেখতে কেমন
শিশিরঃ- জানি না
রিয়াদঃ- কেন
শিশিরঃ- আরে আমি তো দেখতেই যায় নি
রিয়াদঃ- কেন
শিশিরঃ- আমার এসব ভালো লাগে না,বাকিদের পছন্দ হলেই হলো
রিয়াদঃ- আচ্ছা তোর কেমন ভাবি চাই
শিশিরঃ- আমার মায়ের মতো হবে,আমার বড় বোনের মতো আমাকে আদর করবে,আমার সব রকম ভালো মন্দ দেখবে,এক কথায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড
রিয়াদঃ- এরকম ভাবি পাওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার
শিশিরঃ- আমি পাবো
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বাসায় চলে গেলাম,রাত অনেক হলো,তাই খাওয়া দাওয়া করে, ঘুমিয়ে গেলাম
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গেলাম একটু ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে আসলাম
মাঃ- তুই এসেছিস
শিশিরঃ- হুম
মাঃ- তাড়াতাড়ি নাস্তা করে রেডি হ
শিশিরঃ- কেন কী হয়েছে
মাঃ- তোর ভাইয়ার বিয়ের বাজার করতে যেতে হবে তো,ঐদিক থেকে তোর ভাবি আর তার বোন নিলা আসবে
শিশিরঃ- আমি যাবো না
মাঃ- কেন
শিশিরঃ- আমার এগুলো ভালো লাগে না,তোমরা যাও
মাঃ- তোর জন্য কী কিছু নিবি না
শিশিরঃ- কী নিবো
ভাইয়াঃ- তুই চল আমাদের সাথে
শিশিরঃ- আমি যাবো না,তোমার পছন্দ মতো কিছু একটা নিয়ে এসো
এরপর সবাই চলে গেলো শপিং করতে,অনেকক্ষণ ধরে শপিং করছে সবাই,মেয়েদের শপিং তো এরকমই
শপিং করা শেষ,তখনই ভাইয়া বললো
ভাইয়াঃ- মা,শিশিরের জন্য কী নিবো বুঝতে পারছি না
নিলাঃ- জামাই বাবু,শিশির আবার কে
ভাইয়াঃ- আমার ভাই
নিলাঃ- কই ওনাকে তো দেখি নি,আমাদের বাড়িতে
ভাইয়াঃ- আসলে সে এমনি যায় নি
ভাবিঃ- ওর জন্য ভালো দেখে শর্ট নাও
নিলাঃ- জামাই বাবু, আপনি আমাকে বলুন আপনার ভাই দেখতে কেমন,তাহলে আমি ওনার জন্য পছন্দ মতো কাপড় দেখিয়ে দিতে পারি
ভাইয়াঃ- আমার ভাই তো সিনেমার হিরুদের মতো,দেখতে মাশাআল্লাহ, বেশি বললে নজর লাগতে পারে,অতিরিক্ত লম্বাও না আবার ছোটও না, এক কথায় মিঃ পারফেক্ট
নিলাঃ- ও তাই বুঝি
ভাইয়াঃ- হুম শালিকা
নিলাঃ- এই নাও (একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি দিয়ে)
ভাইয়াঃ- এটা
নিলাঃ- হুম এক কথায় পারফেক্ট লাগবে
এরপর আরও কিছু জিনিস পত্র দিয়ে সবাই চলে এলো,আমার রুমে এসে ভাইয়া পাঞ্জাবিটা দিলো
শিশিরঃ- আরে ভাইয়া,তোমার পছন্দের তো জবাব নেই
ভাইয়াঃ- আরে এটা আমি পছন্দ করি নি
শিশিরঃ- তাহলে কে করেছে
ভাইয়াঃ- নিলা
শিশিরঃ- এই নিলাটা আবার কে
ভাইয়াঃ- তোর হবু ভাবির ছোট বোন
এরপর ভাইয়া চলে গেলে,এভাবে বিয়ের বিভিন্ন কাজ করতে করতে বাকি দিনগুলো কেটে গেলে।আজ বিয়ে সবাই কনের বাড়িতে চলে গেলাম,কারণ বিয়ে হচ্ছে সেখানে
সবাই খাওয়া দাওয়া করতেছে,আমি ভাবলাম এই সুযোগে ভাবিকে একটু দেখে আসি
আস্তে আস্তে ভিতরে গেলাম,দেখছি ভাবি একটি রুমে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, বউ সেজে আছে,তাই আমার চিন্তা সমস্যা হয় নি,আমি সেদিকে যাবো ঠিক তখনই একটি মেয়ে আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছে,মেয়েটি আর কেউ নয়,সেটি হলো নিলা,কিন্তু সমস্যা আমরা কেউ কাউকে চিনি না
নিলাঃ- কে আপনি এখানে কী চান
শিশিরঃ- না মানে,ভাবিকে একটু দেখবো
নিলাঃ- যার ভাবি,সে-ই দেখতে আসে নি,আপনি কে হে (একটু রেগে)
শিশিরঃ-.... (নিলার কথা শুনে বুঝতি পেরেছি, সে আমার কথায় বলছে)
নিলাঃ- কী হলো চুপ করে আছেন কেন? কে আপনি
শিশিরঃ- আমি শিশিরের বন্ধু রিয়াদ
নিলাঃ- (হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে ভাবতে, পাঞ্জাবিটা দেখে,--- মনে মনে বলছে--- আরে এটা তো আমি জামাই বাবুর ভাই শিশিরের জন্য পছন্দ করে দিয়ে ছিলাম, তাহলে এটা ওর কাছে কেন)
শিশিরঃ- কী ভাবছেন, আপনি কে?
নিলাঃ- আমি নিলা,আপনার ভাবির ছোট বোন
শিশিরঃ- ওহ
নিলাঃ- আমার একটু কী যেন উল্টো লাগছে
শিশিরঃ- যেমন
নিলাঃ- আগে বলো এই পাঞ্জাবিটা কর
আমার তখনই মনে পড়লো, যে ভাইয়া বলে ছিলো,পাঞ্জাবিটা নিলা পছন্দ করে দিয়ে ছিলো
শিশিরঃ- এটা আমার, আমি আর শিশির সব সময় একই রকম কাপড় নিয়ে থাকি (কথা ঘুরিয়ে)
নিলাঃ- ওহ,কিন্তু শিশির কোথায়,সে আসে নি
শিশিরঃ- এসেছে,হয়তো বাহিরে আছে
নিলাঃ- ওকে আপনি যান,আপনার ভাবিকে দেখে আসুন
আমি ভাবিকে দেখতে গেলাম, আমাকে দেখে ভাবির বান্ধবীরা সবাই চলে গেলো,আমি ভিতরে গিয়ে ভাবিকে সালাম দিলাম
ভাবিঃ- তুমি বুঝি শিশির
শিশিরঃ- হ্যা ভাবি,(আমি তো অবাক নিলা চিনতে পারে নি, কিন্তু ভাবি ঠিকিই চিনেছে)
ভাবিঃ- নিলা তোমাকে কী বললো
শিশিরঃ- আমাকে খুজতেছে,কিন্তু চিনতে পারে নি
ভাবিঃ- তাই নাকি (অবাক হয়ে)
শিশিরঃ- হুম ভাবি,আপনার বোনকে বোকা বানিয়ে দিয়েছি
এরপর আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম,কথা বলে মনে হলো আমি যেমন ভাবি চেয়েছি,ঠিক সেরকম ভাবি পেয়েছি, এক কথায় আমার বড় বোনের মতো,একটু পর আমি চলে গেলাম
অন্যদিকে নিলা চার দিকে তাকিয়ে দেখছে আমাকে দেখে কিনা, তখনই নিলা দেখলো আমার বন্ধু রিয়াদ কয়েক জন লোকে খাওয়া জন্য নিয়ে যাচ্ছে, তখনই নিলা মনে করলো ঐটা আমি,তাই দেরি না করে সোজা চলে গেলো
নিলাঃ- এই যে মিস্টার শিশির
রিয়াদঃ-... (একটু অবাক হলো,তখনই আমি আড়াল থেকে রিয়াদকে চোখ মেরে দিলাম,রিয়াদ বুঝে গেছে)
নিলাঃ- চপু করে আছেন কেন,আপনি কী হে,আপনার ভাইয়া তো বলে ছিলো সিনেমার হিরু,এই আপনি হিরু(মুখ বেঁকিয়ে), আপনার বন্ধু রিয়াদ তো দেখতেই একদম হিরু মতো
রিয়াদঃ- ও তাই নাকি,আপনি রিয়াদকে দেখেছন
নিলাঃ- হ্যা,দেখেছি কথাও বলেছি
রিয়াদঃ- (মনে মনে--- তুই তো বেটি এক নম্বরের বোকা,মানুষ না চিনে লাফচ্ছিস)
নিলাঃ- কিছু বললেন
রিয়াদঃ- না তো
তারা কথা বলছে,তখনই আমার বাবা এসে রিয়াদকে বললো
বাবাঃ- এই রিয়াদ তুই এখানে,আর শিশির কোথায় ওকে দেখছি না যে
বাবার কথা শুনে রিয়াদ বোকা হয়ে গেলো
রিয়াদঃ- বাবা,রিয়াদ তো ঐদিকে
বাবাঃ- আরে রিয়াদ, তুই কী পাগলের মতো কথা বলছিস,আমি তোর আংকেল আর তুই আমাকে বাবা বলছিস, ব্যাপার কী
নিলাঃ- ও কিছু না আংকেল,আপনি যান আমি শিশিরকে খুজে দিচ্ছে
বাবাঃ- ওকে মা
এরপর বাবা চলে গেলো...
নিলাঃ- তো মিস্টার শিশির, সরি রিয়াদ, এতোক্ষণ তো ভালোই অভিনয় করেছেন, আপনি রিয়াদ হলে শিশির কোনটা
রিয়াদঃ- সরি আমার ভুল হয়ে গেছে, আসলে আপনি প্রথমে যাকে রিয়াদ মন করেছেন সে-ই হলো শিশির
নিলাঃ- ও তাই নাকি
একটু পর আমার সাথে আমার দেখা হলো নিলার
শিশিরঃ- ও আপনি,শিশিরকে পেয়েছেন
নিলাঃ- হুম পেয়েছি, কথাও বলেছি
শিশিরঃ- ও তাই নাকি,তাহলে তো ভালোই হলো
নিলাঃ- ভালো তো কিছুই হয় নি,এবার হবে
শিশিরঃ- মা.মা.মা --মানে
নিলাঃ- মানেটা পরে বলবো
এই বলে আমার কাছে আসছে,আমি পিছিয়ে ঘুরল দিলাম দৌড়
আসলে নিলা আমাকে এভাবে দেখতে চাওয়ার কারণ হলো,ভাইয়া যে বলে ছিলো আমি দেখতে হিরুর মতো সেজন্য নিলার এমন করলো,মেয়েরা একটু ঐরকমই কিউট পোলা দেখলেই লাইন মারতে চেষ্টা করে।
এরপর বিয়েটা হয়ে গেলো,সবাই যার যার মতো চলে গেলো,আমরাও ভাবিকে নিয়ে চলে এসেছি,সাথে নিলাও এসেছে
চলবে...
বিঃদ্রঃ- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
Post a Comment