#পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানি বউ#


 #✔পার্টঃ-০৯✔#


-----ঝুমুর আম্মুঃ- ওগো শুনছো দেখো না আমার মেয়ে জানি কি রকম করছে তাড়াতাড়ি আসো।


( নীলার আর ঝুমুর আম্মুর চিৎকার শুনলো রাফি ওর রুমে বসে)


-----রাফিঃ- কি হলো ওখানে এতো চেচামেচি কেন? তাও আবার ঝুমুর এর রুম থেকে। ঝুমুরের আবার কিছু হলো না তো?


( রাফি দৌড়ে ঝুমুর এর রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো ঝুমুর নিচে পরে আছে। রাফি তাড়াতাড়ি গিয়ে ঝুমুর এর পাসে বসে ওর মাথাটা রাফির কোলে রাখলো) 


-----রাফিঃ- ঝুমুর এই ঝুমুর তোর কি হলো চোখ খোল---নীলা ওর এ অবস্থা কি করে হলো?

-----নীলাঃ- আমি জানি না ভাইয়া। আমি ঝুমুর এর রুমে এসে দেখি ও নিচে পরে আছে এরকম করে।


( মি আশরাফ মি আলতাফ সহ সবাই দৌড়ে আসলো। মি আলতাফ তো পাগল প্রায় এক মাএ মেয়ের এ অবস্থা দেখে। আর তুষারও কি থেকে কি করবে বুঝতে পারচে না। রাফি ঝুমুরকে কোলে তুলে নিয়ে বাহির হতে লাগলো আর তুষারকে বললো যে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে। রাত তখন ১২ টারও বেশি তুষার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মি আলতাফ তুষার এর পাসে বসে আছে সামনে। আর পিছণের ছিটে রাফি ঝুমুরকে কোলে নিয়ে বসে আছে। রাফি ঝুমুর এর মাথাটা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর থেকে ঝুমুরকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। পিছনের গাড়িতে বাকি সবাই আসলো। ঝুমুরকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে গেলো। ডক্টর দেখে ওকে তাড়াতাড়ি ICU তে নিয়ে গেলো। আর ওর treatment করতে লাগলো। একে একে সবাই আসলো হাসপাতালে। ঝুমুর এর আম্মুতো কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। ওনাকে রাফির আম্মু আর তুষার এর বউ অর্না সান্ত্বনা দিচ্ছে। মি আলতাফকে তার বড় ভাই মি আশরাফ সহ তার বাকি ভাইরা সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুষার এরও কান্না করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। আজ ওর এক মাএ পিচ্চি বোনটার এ অবস্থা। রাফি শুধু নিবর দর্শক এর মতো দেখছে। ওর যে কাউকে সান্ত্বনা দেবা বা কান্না করার ভাষা নাই। নীলা কান্না করতে করতে বারান্দায় চলে গেলো। এটা দেখে রাফিও ওর পিছনে পিছনে গেলো। নীলা রাফিকে দেখে হাউমাউ করে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো


-----নীলাঃ-ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করো। আমি যে ঝুমুর এর কষ্ট মোটেও সহ্য করতে পারি না--(কেদে কেদে)

-----রাফিঃ- কাদিস না বোন। ঝুমুর এর কিছু হবে না। ও ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো দেখিস।

-----নীলাঃ- ভাইয়া তুমি জানো না ঝুমুর তোমাকে কতটুকু ভালোবাসে। ঝুমুর এর এ রকম অবস্থা আরো একবার হয়ে ছিলো। যেদিন তুমি ওকে ছেড়ে লন্ডন চলে গিয়েছিলে সেদিন রাতে ওর প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট হয়।

-----রাফিঃ- What?? কি বলিস এগুলা??

-----নীলাঃ- হ্যা। সেদিন তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারে নাই ঝুমুর। তখন ডক্টর বলেছিলো যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ পড়ার কারনে ওর এ অবস্থা হয়েছিলো। আরো বলেছে যে ২য় বার যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে ওর বাচামারা নিয়ে টানাটানি লাগতে পারে।

-----রাফিঃ- কি বলিস বোন? এগুলা তুই আমাকে আগে কেন বলিস নাই?

-----নীলাঃ- বলতে আমি তোমাকে চেয়েছি কিন্তু ঝুমুর আমাকে বলতে দেয় নাই। জানো ভাইয়া বিগত ৫ টা বছর এমন একটা রাত নাই যে ঝুমুর তোমার জন্য কান্না করে নাই। আমি ছাড়া এগুলা আর কেউ জানতো না বাড়ির। তুমি কি জানো আজকে তোমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ প্লানটা কে করেছে?? এ সবটাই ঝুমুর করেছে।


------রাফিঃ- মানে?? তাহলে রিয়া না কি--

-----নীলাঃ-( বাকিটুকু বলতে না দিয়ে)--রিয়া আপু কিছু করে নাই। সবটাই ঝুমুর করেছে। এমনকি রাত ১২ টার সময় তোমার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে তোমার whats up এ ভিডিও মেসেজ পাঠিয়ে ওই তোমাকে জন্মদিন wise করেছিল। তুমি যদি সব সময় এর মতো ওকে আবার অপমান করো সেই ভয়ে ও এই পুরা কাজের cridit নিজে না নিয়ে রিয়া আপুকে দিয়েছে। সবার আড়ালে তোমার রুমে অনেক গুলা গিফট ও রেখে আসে। কাউকে এতোটা ভালো কেউ কি ভাবে বাসতে পারে সেটা আমি কখনো দেখি নাই ভাইয়া যদি ঝুমুরকে না দেখতাম।--(কেদে কেদে)


-----রাফিঃ---নিশ্চুপ---( ঝুমুর আমার জন্য এতো কিছু করেছে। আর আমি কিনা ওকে কষ্ট দেবার জন্য ওকে কাদাবার জন্য উঠে পরে লেগেছি। ছিহহ এসব আমি কি করে করতে পারলাম আমার পাখির সাথে)


-----নীলাঃ-( চোখ মুছে) আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওর এ অবস্থার জন্য একমাএ তুমি দায়ী। হয়তো তুমি ওকে এমন ভাবে অপমান করেছে সেটা ওর সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যদি এটাই হয়ে থাকে তাহলে তুমিও শুনে রাখো একটা কথা। ঝুমুর এর যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবো না।


----রাফিঃ-( আমি নীলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি)-- আমি নিজেই তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। আমি যা ঝুমুর সাথে করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। আমি আর কখনো পাগলিটাকে কষ্ট পেতে দিবো না।--( চোখ থেকে পানি মুছে)


3rd person:- তারপরে রাফিও সবার পাসে এসে দাড়ালো। রাফি স্থির এক জায়গায় থাকতে পারলো না। ICU রুমের সামনে পায়চারি করতে লাগলো। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে ডক্টর বের হলো। সবার আগে রাফি ছুটে গেলো ডক্টর এর কাছে। 


-----রাফিঃ- ডক্টর--ঝুমুর এর কি অবস্থা?? ও ভালো আছে তো?

( ডক্টরকে বের হতে দেখে তুষার মি আলতাফ আর মি আশরাফ সহ সবাই দৌড়ে আসলো)

-----ডক্টরঃ- দেখুন আমরা আল্লাহর রহমতে ওনাকে সুস্থ করতে পেরেছি। আপনারা যদি আর কিছুক্ষণ দেরি করে ওনাকে নিয়ে আসতেন তাহলে তার জিবন রিস্ক এর মধ্যে পরে যেতো। কিন্তু ওনার জ্ঞান এখনো ফেরে নি। কয়েক ঘন্টা পরে ওনার জ্ঞান ফিরতে পারে। চিন্তার কোনো কারন নাই। ওনাকে এখন কেবিন এ শিফট করা হয়েছে।  


-----তুষারঃ- Thank god. অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ডক্টর। আমি কি ওকে দেখতে পারি?

-----ডক্টরঃ- দেখতে পারবেন কিন্তু একজন একজন করে বেশি মানুষ গিয়ে ভিড় করলে রোগির সমস্যা হতে পারে। আর যে কোনো একজন আমার সাথে চলুন কিছু ওষুধ prescribe করতে দিতে হবে।

-----মি আশরাফঃ- ডক্টর আপনি চলুন আমি আসছি।


3rd person:- মি আশরাফ ডক্টর এর সাথে চলে গেলো। ডক্টর এর রুমে। আর এদিকে এক এক করে সবাই ঝুমুর রুমে গিয়ে ওকে দেখে আসছে। অবশেষে রাফির পালা আসলো। রাফি ভিতরে ডুকে দেখলো সাদা বেডে ঝুমুরকে শোয়ানো হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ঝুমুরকে অনেক মায়াবী লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো পরী সুয়ে রয়েছে। রাফি ধীর পায়ে ঝুমুর এর দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে ঝুমুর এর বেডের পাসে রাখা চেয়ারে বসলো। আর ঝুমুর এর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।


-----রাফিঃ- আমি তোকে শুধু কষ্ট দেই তাই না রে? আমি খুব খারাপ। খুব বাজে আমি। নাইলে কি তোকে এতো কষ্ট দেই কি করে আমি। আমার জন্য তুই কত কষ্ট সহ্য করেছিস। শুধু মাএ আমাকে ভালোবাসিস বলে। আর আমি কত বোকা বল আমি তোর ভালোবাসা বুজতে পারি নাই।--(চোখের পানি মুছে)

এখন থেকে তোকে আর কখনো কষ্ট দিবো না প্রমিজ। ভালোতো আমিও তোকে বাসি সেই ছোট বেলা থেকে। কিন্তু সেটাকে মনের গহীনেই চেপে রেখেছি। প্রকাশ করি নাই।৷ এখন আর এসব হবে না-- অনেক ভালোবাসবো তোকে। অনেক বেশি আগলে রাখবো--(বলেই ঝুমুর এর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলাম)


3rd person:- রাফি ঝুমুর এর কেবিন থেকে বাহিরে বের হয়ে ওর আব্বুর কাছে গেলো।


-----রাফিঃ- আব্বু--

-----মি আশরাফঃ- হ্যা বলো--

-----রাফিঃ- ডক্টর কি বললো??

-----মি আশরাফঃ- ডক্টর বললো আমাদের ঝুমু না কি কোনো একটা কিছু নিয়ে মানসিক সমস্যায় আছে। কোন যেন এক টেনশন ওর মাথায় প্রভাব বিস্তার করেছে খুব খারাপ ভাবে সেটাই ডক্টর বললো। কিন্তু আমি বুজতে পারছি না ঝুমু কি এমন টেনশনে আছে যে আমাদের কাউকে বলতে পারছে না।--(চিন্তিত হয়ে)

------মি আলতাফঃ- হুমম তাই তো ভাইয়া আমি তো আমার ঝুমুর কোনো চাওয়া পাওয়া অপূ্র্ন রাখি নাই৷ তাহলে আমার মামনির কি এমন টেনশন যেটা আমাদের কাউকে বলতে পারছে না।

-----রাফিঃ- তুমি চিন্তা করো না মেঝো চাচ্চু। আমি ঝুমুরকে একদম স্বাভাবিক করে তুলবো ইনশাল্লাহ। আব্বু আর কি বললো ডক্টর?? 

-----মি আশরাফঃ- ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ঝুমু সুস্থ হয়ে যাবে। আর এ ১ সপ্তাহ সম্পর্নূ বেড রেষ্টে থাকতে হবে। কিছু মেডিসিনও প্রেসক্রাইভ করে দিছে এগুলা ওকে নিয়মিত খাওয়াতে হবে। আর ওকে সব সময় হাসিখুশি রাখতে হবে। সুস্থ হবার পরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। আর ডক্টর বলেছে ঝুমুর এর মন যেন সব সময় ফুরফুরে থাকে। আর হ্যা ডক্টর এও বলেচে ঝুমুর না কি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না এটা কি সত্যি নীলা??

-----নীলাঃ- হ্যা আব্বু। কালকে যে সকাল বেলা মেঝো চাচ্চু ওকে জোর করে খাওয়ালো তারপরে আর একটা দানা পানিও খায় নাই।

-----মি আলতাফঃ- কি বলছো নিলা? আমাকে বলোনি কেন যখন ঝুমুর সারাদিনে কিছু খায় নাই? এ জন্যই তো আমার মেয়েটা এতো দুর্বল হয়ে পরেছে।

-----নীলাঃ- কাউকে বলে দিলে তো তারপরে বলবো। ঝুমুর যে চাপা স্বভাবের না ও কাউকে কিছু বলবে। আর আমাকেও কিছু বলে দেয় না।


( তখনই তুষার ঔসধের প্যাকেট আর কিছু খাবার প্যাকেট নিয়ে আসলো)


-----তুষারঃ- আব্বু এ নাও ঝুমুর এর ঔষধ ডক্টর যা যা বলেছে সেগুলা। আর এই খাবার প্যকেট গুলা তোমরা সবাই খেয়ে নাও। আর হ্যা আব্বু-,-আম্মু, বড় আম্মু,রাফি আর নীলাকে বাদে সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। খামোকা এখানে ভিড় করে কোনো লাভ নাই।

-----রাফিঃ- ঠিক করেছিস ভাইয়া। সবাইকে এখানে কোনো দরকারে আসবে না।


( তারপরে সবাই তুষার এর আনা খাবার গুলা খেয়ে ঝুমুর এর জ্ঞান আসার অপেক্ষা করতে লাগলো 


💝🥀 সবাইকে অগ্রিম Happy New Year🥀💝 

চলবে👉 

Post a Comment

Previous Post Next Post