দেখো আম্মু এখন আমি কিছুতে ই বিয়ে করতে পারবো না আর আমার এখনো তো বিয়ের বয়স হয়নি আগে পড়ালেখা শেষ করি তারপর বিয়ে নিয়ে ভাববো । 


একদম চোখমুখ বুঝে মায়ের সামনে কড়া গলায় কথাগুলো বলে ফেললাম । আম্মু কিছুটা বিনোয়ের সুরে বললেন 

আমি কি করবো বল বিয়েটা তো আর আমি ঠিক করিনি বিয়ে ঠিক করেছে তোর বাবা তোর বাবাকে গিয়ে বল আমার সাথে এত গরম দেখালে কি লাভ হবে বল । 

দেখো আম্মু তোমরা আমাকে যার সাথে ইচ্ছা বিয়ে দিতে পারো কিন্তু রুপা আপুকে কিছুতেই বিয়ে করা সম্ভব না কারণ তাকে আমি কখনো ঐভাবে দেখিনি আর তার চেয়ে সবচেয়ে বড় কথা হলো রুপা আপু আমার থেকে সিনিয়ার তাহলে তার সাথে কিভাবে আমার বিয়ে হবে বলো । 

সিনিয়র হয়েছে তো কি হয়েছে? তোর থেকে তো তেমন বেশি বড় না মাত্র দু বছরের বড় । 

আমি বেশ কড়া মেজাজে বললাম তোমাদের যা ইচ্ছা তাই কর আমার কিছু বলার নেই । কথাটি বলেই সরাসরি কোনো দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে আসলাম । 

আপনারা হয়তোবা কিছুই বুঝতে পারতেছেন না তাই না ! ঠিক আছে আপনাদের আমি বুঝিয়ে বলছি এতক্ষণ যার সাথে কথা বললাম তিনি হচ্ছে আমার আম্মু আর আমি তাদের একমাত্র সন্তান আর যার সাথে আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে সে হচ্ছে আমার চাচাতো বোন রুপা আপু ।

রুপা আপু ছোটকাল থেকে আমাদের বাসায় বড় হয়েছে কারণ হচ্ছে রুপা আপু যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে তখন তার বাবা-মা একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় তারপর থেকে আমাদের বাসায় বড় হয়েছে । 

রূপা আপু আর আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলার কারণ হচ্ছে আমি আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে গেছিলাম তো সারাদিন ঘোরাঘুরি করার পর বাসায় যখন আসতে ছিলাম তখন রাস্তায় রুপা আপুর সাথে দেখা হয়ে যায় আর মূলত এই দেখা হওয়াটাই বর্তমানে আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । 

আমি আর আমার ফ্রেন্ড মিলি যখন রিকশায় বসে ছিলাম তখন কিছুটা দূরে রুপা আপু আর তার এক ফ্রেন্ড আসতেছিল তো আমি আপুর দিকে তাকিয়ে যা বুঝতে পারলাম তিনি হয়তোবা আমাকে দেখে খুব বেশি পরিমাণ রেগে ছিল বা ওই টাইমে কোন কারনে রেগে ছিল । 

আমি রুপা আপুর সাথে কোনো কথা না বলে ওই টাইমে আমি মিলিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেশ অনেক সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় আসার পর কি ঘটলো তা তো আপনারা কিছুক্ষন আগে জানতে পেরেছেন । 

আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভাবলাম যে কি কারণে রূপা আপুর সাথে আমার বিয়েটা বাবা ঠিক করেছে । কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে আবারো আম্মুর কাছে চলে গেলাম এবং আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম 

আম্মু একটা কথা জিজ্ঞেস করলে সত্যি সত্যি উত্তর দেবে 

কি জিজ্ঞেস করবি কর

আচ্ছা রুপা আপুর সাথে তোমরা যে আমার বিয়েটা ঠিক করলা এটা কেন করলা বিয়ে ঠিক করার কারণ টা কি আর বিয়ে তুমি ঠিক করছো নাকি আব্বু ঠিক করছে । 

কথাটি শোনার পর আম্মু বেশ কিছুটা হাসিমুখ নিয়ে বললেন ।

ও এই কথা, রুপা তোকে পছন্দ করে এবং অনেক ভালোবাসে এটা তো তুই জানিস । আজকে দুপুরে নাকি তোকে কোন মেয়ের সাথে ঘুরতে দেখছে এটা নিয়ে মেয়েটা বাসায় এসে খুব কান্নাকাটি করছে । 

তোর বাবা আর আমি চিন্তা করে দেখলাম তোদের বিয়েটা দিয়ে দিলে খুব ভালো হয় । মা বাবা মরা মেয়ে ছোটকাল থেকে তো আমরাই ওকে আদর যত্ন করে মানুষ করেছি বাকিটা জীবন না হয় আমাদের কাছেই থাকুক । 

তাই বলে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করা ঠিক হবে । 

বিয়ে এখন করলে কি আর পরে করলে কি কয়েক বছর পরে বিয়ে করলেও তোকে রুপাকেই বিয়ে করতে হবে তাহলে পিছিয়ে লাভ আছে এখনই বিয়েটা করে নে আর মেয়েটা সে দুপুর থেকে বাসায় এসে কান্না করতেছে এখনো খাবার পযন্ত খায়নি । 

কি বলো রুপা আপু এখনো দুপুরের খাবার খাইনি । 

আম্মু কিছুটা মুখ ভার করে বলল, আমি তো সেটাই বলছি সে কখন থেকে রুমের দরজা আটকে শুয়ে আছে আমি কয়েকবার ডাক দিলাম আসলো না তুই একটু গিয়ে দেখ তো ডেকে খাবার খেতে আসে কি না । 

আম্মুর সাথে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমি সরাসরি রুপা আপু রুমের দিকে পা বাড়ালাম রুপা আপুর রুমের সামনে এসে দরজায় নক করে যখন বললাম আপু রুমে আছো । 

রুপা আপু বেশ নরম গলায় বলল "হ্যাঁ কিছু বলবি" । 

হ্যাঁ কিছু তো বলার জন্যই আসছিলাম তুমি নাকি এখনো দুপুরে খাবার খাওনি । 

এখন খাব না ভালো লাগতেছে না পরে খাব তুই এখন যা এখান থেকে । 

আমি খুবই করুণ সুরে বললাম 

দরজা খোলো তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। 

রুমের ভিতরে থেকে কোন আওয়াজ আসলো না আমি আবার বলতে লাগলাম 

ঠিক আছে তোমার যা করার করো আমি আর কখনো তোমাকে ডাকতে আসবো না থাকো তুমি । 

কথাটি বলে যেই না পিছনে ঘুরে হাটা ধরলাম অমনি দরজা খোলার শব্দ আসলো পিছনে থেকে এবং আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি রূপা আপু দরজা খুলে দিয়েছে । 

রুপা আপুর দিকে তাকানোর পর সর্বপ্রথম আমার চোখে যেটা পড়লো সেটা হচ্ছে আপুর মিষ্টিমুখ খানা যেন পুরো লাল হয়ে গিয়েছে। আর তার চোখ গুলো কেমন ফুলে ফুলে গেছে হয়তোবা শুয়ে শুয়ে কান্না করতেছিল ‌‌ । 

রুমের ভিতরে গিয়ে বসার পর রুপা আপু স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো কি বলবি বল 

দুপুরে খাবার খাওনি কেন ।

এমনি ভালো লাগতেছে না তাই খাইনি । 

কিন্তু আমি তো অন্য কিছু শুনলাম । 

রুপা আপু বেশ অবাক হয়ে বললেন অন্য কারণ বলতে কি শুনেছিস তুই....
চলবে...!

গল্পঃ রোমান্টিক সিনিয়র আপু যখন হবু বউ
লেখক: শাহাদাৎ নুসু
পর্ব ০১

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]


Post a Comment

Previous Post Next Post