পিচ্চি চাচাতো বোন যখন অভিমানী বউ-
পার্টঃ-২২
-----রাফিঃ-আচ্ছা এখন চল আজকে থেকেই ঘুরাঘুরি শুরু করতে হবে।
♠এই বলে ঝুমুরকে আবার টেনে আড্ডা স্থলে নিয়ে গেলো রাফি। তারপরে ওরা সবাই রিসোর্ট এর সামনে একটা বীচ আচে সেখানে বেড়াতে গেলো। যে যার মতো ঘুরছে। পানিতে ঝপাঝাপি করছে। বিশেষ করে ছেলেরা। ওরা ফাজলামো একটু বেশিই করছে। আর DSLR ক্যামেরা দিয়ে গ্রুপ পিক তুলছে। মেয়েরাও হাটু পর্যন্ত নেমে পিক তুলছে। যার যার মতো সবাই আনন্দ করছে। ঝুমুর ধীরে সুস্থে হাটছে আর ওদের কির্তি কুলাপ দেখছে। সমুদ্রের কিনারায় আস্তে আস্তে হাটছে ও। সমুদ্রের ঢেউ এসে বারবার ওর পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। নীলা ঝুমুর পাসেই দাড়িয়ে মনে হয় হাজারটা সেলফি তুলছে। ঝুমুর নীলার কান্ড দেখে হাসছে। ঝুমুর এক ধ্যানে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে♣
-----ঝুমুঃ- এই সমুদ্রের পানির গভিরতায় যদি হারিয়ে যেতে পারতাম। তাহলে কতই না ভালো হতো। এই মানসিক চাপ থেকেও তো অন্তত মুক্তি পেতাম।
♠হঠাৎ করে পিছন থেকে কে যেন দৌড়ে এসে ঝুমুরকে ভেজা সরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিলো। ঝুমু তাতে চমকে উঠলো। তারপরেই শোনা গেলো রাফির কথা___রাফি ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো_♠
-----রাফিঃ- এই ইশান__আমাদের কয়টা পিক তুলে দে না। সুন্দর করে তুলবি।
♠রাফি ঝুমুরকে পিছন থেকে ভেজা শরিরে জরিয়ে ধরলো। আর ইশানকে বলায় ও ফটাফট পিক তুলে ফেললো। এবার ঝুমুরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো রাফি। ঝুমু ওর দিকে তাকাতেই ওই অবস্থায়ও ইশান ফটাফট অনেক গুলা ছবি তুলে নিলো। ঝুমুর ভেবে পাচ্ছে না ওর সাথে এসব কি হচ্ছে? রাফি এরকম আজব কাজ কেন করছে ওর সাথে?? এভাবে রাফি ঝুমুরকে জরিয়ে ধরে বিভিন্ন স্টাইলে দাড়ালো আর ইশাণ ফটো তুললো। ফটো তোলা শেষে♠
-----রাফিঃ- ইশান শোন ফটো গুলা আমার ফোনে সেভ করে দিস।
♠এবার ঝুমু বলতে শুরু করলো♠
-----ঝুমুঃ-- আচ্ছা__এরকম ভেজা মুরগির মতো পোজ দিয়ে কি ফটো তোলাটা খুব জরুরি ছিলো?? তাও আবার আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে--(বিরক্ত কন্ঠে)
----রাফিঃ- ওসব তুই বুজবি না--(ওর নাক টেনে দিয়ে)
♠ঝুমুর অবাগ হয়ে রাফির চলে যাবার পানে তাকিয়ে আছে। সব কিছু ও মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাথায় কিছু খিলছে না। এভাবেই চলে গেলো। আরো দুই দিন__এনগেঞ্জমেন্টের দিনের আগের রাতে___সেদিন সারাদিন প্রচুর কাজের ভিতর দিয়ে কেটেছে। এনগেঞ্জমেন্টের সকল বন্দোবস্ত করা হলো। তারপরে সারা হল সাজানো লাইটিং,,ডেকোরেশন ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে গেলে সারাদিন অনেক ঢকলের উপর দিয়ে গেছে।--(শুধুমাএ যাদের বিয়ে তাদের কোনো কষ্ট হয় নাই)--সারাদিন বেশি হার্ড ওয়ার্ক কারনে রাত ১০টা হতেই যে যার রুমে চলে গেলো। সারা রিসোর্ট তখন নিরবতা বিরাজ করছে♠
♠এদিকে নীলাদের রুমে,,মিলি ঘুমে কাদা কাদা,,নীলা রুমে নেই,,আর ঝুমুর চোখে বিন্তমাত্র ঘুমের চিহ্ন ও নাই। রাজ্যের চিন্তা ওর মাথার উপরে ভর করেছে। ঝুমুর একটা কথা চিন্তা করতেই ওর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে যে__কালকে ওর সামনে ওর প্রিয়মানুষটার এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে তাও অন্য কারো সাথে__এসব ভাবতেই ওর চোখ জোরা ঝপাসা হয়ে অশ্রু বৃষ্টি ঝরতে লাগলো। বারান্দায় দাড়িয়ে এসব ভাবছে ঝুমু তখনই ওর চোখ বারান্দার এক কোনে গেলো। দেখলে যে সেখানে ভাঙা কাচের চুরি ফেলানো। কি মনে করে যে ঝুমু ওটার কাছে গেলো আর নিজের হাতে তুলে নিলো। চুড়ির ভাঙা অংশটা দিয়ে আনমনে নিজের কব্জির উপরে রাফির নামের অধ্যাক্ষর লিখলো। ফর্সা চামড়া কেটে লাল রক্ত বের হচ্ছে ঝরঝর করে তাতে ঝুমুর কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই। আশ্চর্য করার বিষয় হলো যে ঝুমুর কোনো ব্যাথা লাগছে না। কারন মনের ব্যাথার কাছে যে এ ব্যাথা তুচ্ছ। কিছুক্ষন পরে নীলা এলো ওর হাতে একটা প্যাকেট ♠
-----নীলাঃ- ঝুমু__জলদি করে এই ব্লাউজটা আর পেটিগোট টা পরে আয় তো__শাড়ি পড়িয়ে দিবো।
♠নীলা ঝুমুর হাতে কালো রংয়ের ব্লাউজ আর পেটিগোট দিয়ে দিলো♠
-----ঝুমুঃ-এই নীলা এতো রাতে এসব পড়ে কি হবে?? কোথায় যাবো??
-----নীলাঃ- তা তুই গেলেই বুজতে পারবি। এখন আর কথা না বাড়িয়ে একটু তাড়াতাড়ি কর না প্লিজ। আজকে তোর জন্য তোর লাইফের সব থেকে গ্রেট সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে__আজকের এ সারপ্রাইজ তোর লাইফটাকে পুরাই বদলে দিবে।
-----ঝুমুঃ-কিন্তু কিসের সারপ্রাইজ?? আর যাবোটাই বা কোথায় সেটা তো বলবি??
-----নীলাঃ- তোর কি আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না--(ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে)
-----ঝুমুঃ- কি বলিস এসব?? তোকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।
-----নীলাঃ- তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে যা বলেছে তাই কর।
----ঝুমুঃ- আঁচ্ছা চল তাহলে__
♠ওয়াশরুম থেকে ঝুমু ব্লাউজ আর পেটিগোট পরে বাহির হয়ে এলো। এবার নীলা ঝুমুকে একটা কালো জর্জেট সিম্পল একটা শাড়ি পরিয়ে দিলো। এরপরে দুই হাতে দুইটা সোনার চুড়ি, নাকে একটা ডায়মন্ডের নোজপিন পরিয়ে দিলো--সেই সাথে লম্বা চুল কোমড় অবদি ছেড়ে দিলো। একদম সাদামাটা ভাবে তৈরি করলো ঝুমুকে। একটু মেকআপ ও করায় নি। ঝুমুরকে তৈরি করার পরে কালো একটা রুমাল দিয়ে ওর চোখ বেধে দিলো নীলা,,♠
-----ঝুমুঃ- আরে আরে চোখ কেন বাধছিস??
-----নীলাঃ- আমাকে বিশ্বাস করিস তো??
-----ঝুমুঃ- হ্যা__করি__কিন্তু__
-----নীলাঃ- আর কোনো কিন্তু নাই। যা হাচ্ছে তা শুধু দেখে যা।
♠ঝুমুরকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নীলা ওকে ধরে ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো। ওকে নিয়ে আস্তে আস্তে রিসোর্টের পিছনের দরজা দিয়ে বাহির হয় সৈকতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। এই জায়গাটাও সাগরের কাছে। কিন্তু অনেক নির্জন।। কোনো জনমানবের চিহ্নও নাও। অর্ধেক পথ নিয়ে যাবার পরে নীলা ঝুমুকে নিয়ে থামলো। তখনই এক আগন্তুকের আগম হলো। আগন্তুক ওদের দিকে এগিয়ে এসে নীলার সাথে ইশারা ইঙ্গিতে দু একটা কথা বললো। নীলা ঝুমুরের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। আর আগন্তুক এসে ঝুমুর দুই গাধ ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। ঝুমুর কাছে হাতের স্পর্শটা অন্য রকম লাগছে।♠
-----ঝুমুঃ- ++আমার মনে মনে হচ্ছে এ স্পর্শ তো নীলার নয়। তাহলে নীলা কই গেলো??))__নীলু__নীলু__কে আপনি?? আর নীলা কোথায় গেলো।--(আতঙ্ক ভরা কন্ঠে)
♠ঝুমুর পাসে থাকা ব্যক্তি কোনো কথা বললো না। এক পর্যায়ে ঝুমুকে নিয়ে সে সৈকতে পৌছে গেলো। সেখানে নিয়ে ঝুমুকে দাড় করালো। আর ঝুমুরের কানে ফিসফিস করে বলতো লাগলো♠
-----আগন্তুকঃ-আমাকে চিনতে পারছিস না ঝুমু??--(ছোট স্বরে)
♠ লোকটির কন্ঠ শুনে ঝুমু চমকে উঠলো। এ কন্ঠ তো রাফি। তারপরে রাফি আস্তে করে ঝুমুর চোখ থেকে রুমাল টা খুলে দিলো। অন্ধকারে চোখ অবস হয়ে আসছিলো চোখ বাধার ফলে। চাদের আলোতে পুরা সৈকত আলোকিত হয়ে আছে। ঝুমু পিটপিট করে তাকালো। রাফি ঝুমুরকে একদৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে। একদম।রাফির মনের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে ঝুমুরকে নীলা। ওকে দেখে রাফির চোখের আর তৃষ্ণা মিটছে না। ফর্সা শরিরে কালো শাড়িতে অপরুপ সুন্দর লাগছে ঝুমুরকে♠_♠ অপরদিকে ঝুমুও ফিদা হয়ে গিয়েছে রাফি দেখে। রাফিও কালো শার্টের উপরে কালো মখমলের একটা ব্লেজারে অসাধারণ লাগছে ঝুমুর কাছে। রাফির সামনে থাকা চুল গুলা হালকা হওয়ায় বারেবারে কপালে বারি খাচ্ছে। রাফি ঝুমুরের আরো কাছে এলো। ঝুমু রাফির একদম বুক বরাবর দাড়িয়ে আছে♣
-----ঝুমুঃ- তুমি এখানে কেন??
-----রাফিঃ- কেন?? আমায় এখানে আশা করিস নাই বুজি??
-----ঝুমুঃ- না_তা_নয়! কিন্তু আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন??
-----রাফিঃ- কিছু কথা বলার জন্য__কিছু দেখানোর জন্য।
-----ঝুমুঃ- কি বলবে??আর কিই বা দেখাবে??
-----রাফিঃ- ওয়েট বলছি।
♠রাফি এবার লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো♠
-----রাফিঃ- জানিস__আমি না একজনকে খুব ভালোবাসি..। কিন্তু সে জানে না আমি তাকে এতো ভালোবাসি। আর সব থেকে খুশির খবর কি জানিস__
-----ঝুমু;- কি???-(কাপা কাপা কন্ঠে)
-----রাফিঃ- ওর সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে__আর কালকে ওর সাথেই আমার এনগেজমেন্ট ও। জানিস কত অপেক্ষার পরে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটা এলো???Finally..সে _আমার হবে। তাকে আমি নিজের করে পাবো। নিজের সব সময় পাসে থাকা সঙ্গী হিসেবে পাবো। তুই জানিস না আমি কতটা Happy .
♠ঝুমু হতভম্বের মতো দাড়িয়ে আছে। হা করে তাকিয়ে রাফির কথা শুনছে♠
-----রাফিঃ- জানতে চাইবি না কে সে?? জানতে চাইবি না কার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে??
♠ঝুমু বহুত কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে♠
-----ঝুমুঃ- হুম দেখতে চাই কে সে?? কে সেই ভাগ্যবতী নারি??
-----রাফিঃ- ওকে__আয় তাহলে।
♠ এই বলে রাফি ঝুমুর হাত ধরে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। কিছুদুর যাবার পরে ঝুমু দেখতে পেলো সাদা পর্দা দিয়ে রাখা কিছু একটা উপরে। খুব বড় সেটার আকৃতি। কিন্তু সেটা কি হতে পারে সেটা ঝুমু বুজতে পারছে না। রাফি ঝুমুকে সেই পর্দা দিয়ে ঢাকা জিনিসটার সামনে নিয়ে গিয়ে দাড় করালো♠
-----ঝুমুঃ- এটা কি??-(অবাগ হয়ে)
-----রাফিঃ- যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে__তার ফটো।
-----ঝুমুঃ-ওহহহ
♠কান্নায় ঝুমুরের গলা আটকে আসছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোলে রাখছে♠
-----রাফিঃ- Are you ready?? jumu??
-----ঝুমুঃ- হুমমম--
-----রাফিঃ-okhy...then.
♠ এই বলে রাফি পর্দার এক কোনা ধরে জোরে টান দিলো। যার ফলে পর্দার ভিতর দিয়ে বের হয়ে আসলো বড়সড় একটা আয়না। আয়নার একদম সামনাসামনি ঝুমুর। আর তার পাসে রাফি। আলো আধারিতে ঝুমুরের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাফি ঝুমুর দুই বাহু শক্ত করে জরিয়ে ধরে আয়নাতে থাকা ঝুমুররের প্রতিচ্ছবির দিকে ইশারা করে♠
-----রাফিঃ- Look at her..she is my heart..she is my life..My everything is she!.__দেখ ঝুমু ভালো করে চেয়ে দেখ আমার মনের রানীকে,,যে আমার এই পুরাটা হৃদয় জুরে বিরাজমান। যাকে আমি আমার মন দিয়ে বসে আছি। যাকে আমি আমার সম্পূর্ণটা দিয়ে ভালোবাসি। যার সাথে আমার বিয়ে হবে। যে হবে কয়েকদিন পর থেকে আমার লক্ষী বউ_ যে হবে আমার জিবন চলার সাথী_,যে হবে আমার সন্ধ্যার ক্লান্ত ভেজা শরিরের ওষধ,,দেখ দেখ ঝুমু__
♠ঝুমুর যেন আকাস থেকে পড়লো। কি হচ্ছে এসব?? এ কি করে সম্ভব?? তারমানে রাফি তাকেই ভালোবাসে??ওর সাথেই রাফির বিয়ে ঠিক হয়েছে??♠
-----ঝুমুঃ- কি বলতো তুমি এসব?? আমি কিছু বুজতে পারছি না।
__চলবে___কি??__
Post a Comment